পাতা:বঙ্গ-সাহিত্য-পরিচয় (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রাচীন গদ্য-সাহিত্য—মৃত্যুঞ্জয়ের প্রবোধ-চন্দ্রিকা—১৮১৩ খৃঃ । ১৭০৯ সকল কর । অন্ত সময়ে ঐ অন্ধ দাসীকেও তদ্রুপ অজ্ঞা দিলেন । পরে খোড়া ভূত্য প্রভুর আজ্ঞা পাইয়া ভাবিতে লাগিল যে আমি খোড়া গতিশক্তি রহিত স্বামীর আজ্ঞাপ্রতিপালন কি রূপে করিব। এই চিন্তাতে উদ্বিগ্ন হইয়া বসিয়া আছে ইত্যবসরে ঐ অন্ধ দাসী তাদৃশ ভাবনাতে ভাবিত হইয়া তথাতে গিয়া বসিল । এতদ্রুপে কাকতালীয় হ্যায়ে অজা কৃপাণ ক্রিয় হ্যায়ে বা উভয়ের সহবাস হওয়াতে অন্তোন্তের বিষয় অন্তোন্ত অবগত হইয়া দুই জনে যুক্তি করিয়া পক্ষু দাস অন্ধ দাসী স্কন্ধে আরোহণ করিয়া পরস্পর সাহায্যে প্রভুর আজ্ঞানুসারে তৎসংসারের সকল কৰ্ম্ম করিতে লাগিল । নষ্টাশ্ব-দগ্ধ-রথ ন্যায়ের বিস্তার। দুইজন রথে চড়িয়া এক বনের মধ্যে প্রবিষ্ট হইল। দৈবাৎ সেই কাননের মধ্যে দাবানলেতে এক জনের রথ পুড়িয়া গেল অশ্ব থাকিল অন্ত ব্যক্তির অশ্ব পুড়িয়া মরিল ৰথ থাকিল। এতদ্রুপে এক জন নষ্টাশ্ব অন্তজন দগ্ধরথ হইয়া অটবীতে থাকে। এক দিবস দৈবাং দুইজনেতে দেখা হইল অনন্তর উভয়ে যুক্তি করিয়া একজনরি রথেতে অন্তের অশ্ব যোজনা করিয়া অনায়াসে পরম সুখে গন্তব্য দেশ পাইল । এবম্বিধ দ্যায়ে মনুষ্যেরা নিষ্কাম শুদ্ধ ধৰ্ম্মরূপ রথেতে সংযোজিত পরমেশ্বর স্বরূপ জ্ঞান রূপ হয়েতে আরোহণ করিয়া অনায়াসে পরম সুখেতে অবশু প্রাপ্তব্য পরমেশ্বরকে পাইবে ইহা প্রাচীন বৈদন্তীরা কহিয়াছেন। লাজা-বন্ধন ন্যায়ের কথা । অতিশয় ক্ষুধাৰ্ত্ত এক ব্যক্তি ক্ষুধাতে অত্যন্ত আতুর হইয়া উচ্চ এক স্তম্ভের উপরে শরীরের ভার দিয়া দাড়াইয়া ছিল। ইত্যবসরে কোন পুরুষ কতকগুলি খই আনিয়া ঐ ক্ষুধাৰ্ত্তকে কহিলেন যে ওরে তুই আঁজলা পাত তোরে আমি কিছু খই দেই। এ কথাতে ঐ ক্ষুধাৰ্ত্ত লোক অতি ব্যগ্রতাতে তাড়াতাড়ি করিয়া ঐ খামের দুই পাশে দুই হাত রাখিয়া অঞ্জলি পাতন করিল পরে সে পুরুষ তার অঞ্জলিতে খই দিয়া গেল। অনন্তর ঐ ব্যক্তি আপনি অত্যন্ত ক্ষুধিত মুখ বাড়াইয়া না খাইতে পারে না অন্তকে দিতে পারে না ত্যাগ করিয়া বন্ধনমুক্ত হইতে পারে। অল্পে অল্পে লাজ বাতাসে উড়িয়া যাইতে থাকে তথাপি আমি এই খই খাইব এই দৃঢ়তর প্রত্যাশাতে হস্তদ্বয়ের বন্ধন মুক্ত করিতে না পারিয়া খইয়া বন্ধনোত বন্ধ হইয়া থাকেন। এতাদৃশ ভায়েতে মানবেরা এক অঞ্জলি খই খাইবার প্রায় অতি তুচ্ছ সাংসারিক ভোগ প্রত্যাশা মাত্রে এ সংসারে বদ্ধ হইয়া থাকে এ কথা বৈদান্তীরা কহিয়াছেন।