পাতা:বঙ্গ-সাহিত্য-পরিচয় (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৮৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রাচীন গদ্য-সাহিত্য—মহর্ষির জীবনী—১৯শ শতাব্দীর মধ্যভাগ । ১৭৯৭ আহার করিতেন। আমিও তাহার হবিন্যান্নের ভাগী ছিলাম। র্তাহার সেই প্রসাদ আমার যেমন স্বাদু লাগিত তেমন আপনার খাওয়া ভাল লাগিত না। র্তাহার শরীর যেমন সুন্দর ছিল কার্য্যেতে তেমনি তাহার পটুতা ছিল এবং ধৰ্ম্মেতেও তাহার তেমনি আস্থা ছিল। কিন্তু তিনি মা-গোসায়ের সতত যাতায়াত বড় সহিতে পারিতেন না । তাহার ধৰ্ম্মের অন্ধ-বিশ্বাসের সহিত একটু স্বাধীনতাও ছিল। আমি তাহার সহিত আমাদের পুরাতন বাটতে গোপীনাথ ঠাকুর দর্শন করিতে যাইতাম। কিন্তু আমি তাহাকে ছাড়িয়া বাহিরে আসিতে ভালবাসিতাম না । র্তাহার ক্রেগড়ে বসিয়া গবাক্ষ দিয়া শান্তভাবে সমস্ত দেখিতাম। এখন আমার দিদিমা আর নাই। কিন্তু কত দিন পরে কত অন্বেষণের পরে আমি এখন আমার দিদিমার দিদিমাকে পাইয়াছি ও তাহার ক্রেগড়ে বসিয়া জগতের লীলা দেখিতেছি । দিদিম মৃত্যুর কিছুদিন পূৰ্ব্বে আমাকে বলেন, আমার যা কিছু আছে আমি তাহ আর কাহাকেও দিব না তোমাকেই দিব। পরে তিনি তাহার বাক্সের চাবিটা আমাকে দেন । আমি তাহার বাক্স খুলিয়া কতকগুলিন টাকা ও মোহর পাইলাম। লোককে বলিলাম যে আমি মুড়ি মুড়কি পাইয়াছি। ১৭৫৭ শকে দিদিমার যখন মৃত্যুকাল উপস্থিত তখন আমার পিতা এলাহাবাদ অঞ্চলে ভ্রমণ করিতে গিয়াছিলেন। বৈদ্য আসিয়া কহিল রোগীকে আর গৃহে রাখা হইবে না। অতএব সকলে আমার পিতামহীকে গঙ্গাতীরে লইয়া যাইবার জন্ত বাড়ীর বাহিরে আনিল। কিন্তু দিদিমা আরও বাচিতে চান, গঙ্গায় যাইতে তাহার মত নাই। তিনি বলিলেন যে “যদি দ্বারকানাথ বাড়ীতে থাকিত তবে তোরা কখনই আমাকে লইয়া যাইতে পারিতিস্নে”। কিন্তু লোকে তাহা শুনিল না। তাহাকে লইয়া গঙ্গাতীরে চলিল। তখন তিনি কহিলেন, “তোরা যেমন আমার কথা ন শুনে আমাকে গঙ্গায় নিয়ে গেলি তেমনি আমি তোরদের সকলকে খুব কষ্ট দিব, আমি শীঘ্ৰ মরিব না”। গঙ্গাতীরে লইয়া একটা খোলার চালাতে তাহাকে রাখা হইল । সেখানে তিনি তিন রাত্রি জীবিত ছিলেন । আমি সেই সময়ে গঙ্গাতীরে তাহার সঙ্গে নিয়ত থাকিতাম। দিদিমার মৃত্যুর পূর্বদিন রাত্রিতে আমি ঐ চালার নিকটবর্তী নিমতলার ঘাটে একখানা চাচের উপর বসিয়া আছি। ঐ দিন পূর্ণিমার রাত্রি,–চন্দ্রোদয় হইয়াছে, নিকটে শ্মশান। তখন দিদিমার নিকট নাম সঙ্কীর্তন হইতেছিল, “এমন দিন কি হবে, হরিনাম বলিয়া প্রাণ যাবে”। বায়ুর সঙ্গে তাহার অল্প অল্প আমার কাণে আসিতেছিল। এই অবসরে হঠাৎ আমার মনে এক আশ্চৰ্য্য উদাস ভাব উপস্থিত হইল। আমি যেন আর পূর্বের মানুষ নই। ঐশ্বৰ্য্যের উপর শ্মশান-বৈরাগ্য ।