পাতা:গল্পগুচ্ছ (প্রথম খণ্ড).djvu/২৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
শাস্তি
২৬৯

নীরবে তাহার স্বামীকে দগ্ধ করিতে লাগিল। তাহার সমস্ত শরীর মন যেন ক্রমেই সংকুচিত হইয়া স্বামীরাক্ষসের হাত হইতে বাহির হইয়া আসিবার চেষ্টা করিতে লাগিল। তাহার সমস্ত অন্তরাত্মা একান্ত বিমুখ হইয়া দাঁড়াইল।

 ছিদাম আশ্বাস দিল, “তোমার কিছু ভয় নাই।” বলিয়া পুলিসের কাছে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে কী বলিতে হইবে বারবার শিখাইয়া দিল। চন্দয়া সে-সমস্ত দীর্ঘ কাহিনী কিছুই শুনিল না, কাঠের মূর্তি হইয়া বসিয়া রহিল।

 সমস্ত কাজেই ছিদামের উপর দুখিরামের একমাত্র নির্ভর। ছিদাম যখন চন্দরার উপর দোষারোপ করিতে বলিল দুখি বলিল, “তাহা হইলে বউমার কী হইবে।”

 ছিদাম কহিল, “উহাকে আমি বাঁচাইয়া দিব।” বৃহৎকায় দুখিরাম নিশ্চিন্ত হইল।


তৃতীয় পরিচ্ছেদ

 ছিদাম তাহার স্ত্রীকে শিখাইয়া দিয়াছিল যে, “তুই বলিস, বড়ো জা আমাকে বঁটি লইয়া মারিতে আসিয়াছিল, আমি তাহাকে দা লইয়া ঠেকাইতে গিয়া হঠাৎ কেমন করিয়া লাগিয়া গিয়াছে।” এ-সমস্তই রামলোচনের রচিত। ইহার অনুকুলে যে যে অলংকার এবং প্রমাণ-প্রয়োগের আবশ্যক তাহাও সে বিস্তারিতভাবে ছিদামকে শিখাইয়াছিল।

 পুলিস আসিয়া তদন্ত করিতে লাগিল। চন্দরাই যে তাহার বড়ো জাকে খুন করিয়াছে গ্রামের সকল লোকের মনে এই বিশ্বাস বদ্ধমূল হইয়া গিয়াছে। সকল সাক্ষীর দ্বারাই সেইরূপ প্রমাণ হইল। পুলিশ যখন চন্দনাকে প্রশ্ন করিল চন্দরা কহিল, “হাঁ, আমি খুন করিয়াছি।”

 “কেন খুন করিয়াছ।”

 “আমি তাহাকে দেখিতে পারিতাম না।”

 “কোনো বচসা হইয়াছিল?”

 “না”

 “সে তোমাকে প্রথমে মারিতে আসিয়াছিল?”