পাতা:রাজমোহনের স্ত্রী.djvu/১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাজমোহনের স্ত্রী v) একটি মুটের বোঝা বটে। যে শঙ্খবণিক সেই বিশাল শঙ্খ নিৰ্মাণ করিয়াছিলেন, তিনি বিশ্বকৰ্ম্মার অতিবৃদ্ধ প্রপৌত্র সন্দেহ নাই। আভরণময়ীর স্থলাঙ্গে একখানি মোট শাট ছিল ; শাটখানি বুঝি রজকের উপর রাগ করিয়াছিল, তাই সে পথে অনেককাল গতিবিধি করে নাই । “অষ্টাদশবর্ষীয়ার কোমল অঙ্গে এতাদৃশ অলঙ্কার বেশী ছিল না । বস্তুতঃ তাহার বাক্যালাপে পূৰ্ব্ববঙ্গীয় কোনরূপ কণ্ঠবিরুতি সংলক্ষিত হইত না ; ইহাতে স্পষ্ট অনুভূত হইতে পারে যে, এই সৰ্ব্বাঙ্গসুন্দর রমণীকুসুম মধুমতী-তীরজ নহে—ভাগীরথী-কুলে রাজধানী সন্নিহিত কোনও স্থানে জাতা ও প্রতিপালিত হইয়া থাকিবেক । তরুণীর আরক্ত গৌরবর্ণচ্ছটা মনোদুঃখ বা প্রগাঢ় চিন্তাপ্রভাবে কিঞ্চিং মলিন হইয়াছিল ; তথাচ যেমন মধ্যাহ্নরবির কিরণে স্থলপদ্মিনী অৰ্দ্ধপ্রোজ্জল, অৰ্দ্ধশুস্ক হয়, রূপসীর বর্ণজ্যোতি সেইরূপ কমনীয় ছিল । অতিবৰ্দ্ধিত কেশজাল অযত্নশিথিল গ্রন্থিতে স্কন্ধদেশে বদ্ধ ছিল ; তথাপি অলককুন্তল সকল বন্ধনদশায় থাকিতে অসম্মত হইয়া ললাট কপোলাদি ঘিরিয়া বসিয়াছিল। প্রশস্ত পূর্ণায়ত ললাটতলে নির্দোষ বঙ্কিম ভ্রযুগল ব্রীড়াবিকম্পিত ; নয়নপল্লবাবরণে লোচনযুগল সচরাচর অৰ্দ্ধাংশ মাত্র দেখা যাইত ; কিন্তু যখন সে পল্লব উৰ্দ্ধোখিত হইয়া কটাক্ষ স্মরণ করিত, তখন বোধ হইত যেন নৈদাঘ মেঘমধ্যে সৌদামিনী-প্রভা প্রকটিত হইল। কিন্তু সে যৌবনমদমত্ত তীক্ষ দৃষ্টিক্ষেপে চিন্তাকুলত প্রতীত হইত ; এবং তথায় ক্ষুদ্র ওষ্ঠাধর দেখিলেই বুঝা যাইত, সে হৃদয়তলে কত সুখদুঃখ বিরাজ করিতেছে । তাহার অঙ্গ-সৌষ্ঠব ও নিৰ্ম্মাণ-পারিপাট্য, শারীরিক বা মানসিক ক্লেশে অনেক নষ্ট হইয়াছিল ; তথাচ পরিধেয় পরিষ্কার শাটখণ্ড মধ্যে যাহা অৰ্দ্ধদৃষ্ট হইতেছিল, তাহার অনুরূপ শিল্পকর কখনও গড়ে নাই। সেই স্বঠাম অঙ্গ প্রায় নিরাভরণ, কেবলমাত্র প্রকোষ্ঠে চুড়ী ও বাছতে 'মুড়কিমাদুলী’, ইহাও বড় স্থগঠন।”