পাতা:ভারতবর্ষে.djvu/২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



২৪
ভারতবর্ষে।

ষ্টুয়ার্ট মিল এবং ফ্রান্সের টেন এই বিষয় অনুশীলন করিয়া এই স্থির করিয়াছেন যে, ইহা এক প্রকার কল-কৌশল যাহাতে করিয়া ‘আমি’ বলিয়া একটা পদার্থ আমাদের মধ্যে আছে এইরূপ বিভ্রম উৎপন্ন হয়। বৌদ্ধেরা বলেন, এই ভ্রমটি সর্ব্বাপেক্ষা হানিজনক, আমাদের ফাঁদে ফেলিবার একটি প্রধান উপায়; কারণ এই বন্ধনেই আমরা বিষয়ের সহিত আবদ্ধ আছি—এই মৃগতৃষ্ণাই আমাদিগকে শান্তি ও উপেক্ষা হইতে বিচ্ছিন্ন করিয়া কার্য্যক্ষেত্রে নিক্ষেপ করে ও আমাদিগকে ক্রমাগত সম্মুখে ঠেলিয়া লইয়া যায়। বৌদ্ধেরা ইহাকে ব্যক্তিত্বরূপ বিভ্রম বলেন।

 একবার যদি স্বীকার করা যায় যে, এই জগৎ কেবল ইন্দ্রিয়াভাসের প্রবাহমাত্র, আমাদের অন্তরে কিম্বা বাহিরে কোন পদার্থই স্থায়ী নহে, তখন আমাদের কর্ত্তব্যও সহজে স্থিরীকৃত হইতে পারে। যে ‘আমি’ এত গুরুতর বলিয়া আমার নিকট প্রতীয়মান হইত এক্ষণে আমি তাহাকে বিভ্রম বলিয়া জানিতেছি। ইহা জানিবামাত্র মনুষ্য মুক্তিলাভ করে—এই ‘আমি’ চিরকাল পুষিয়া রাখিবার জন্য সে আর লালায়িত হয় না—সে আর কোন চেষ্টা করে না, কামনা করে না, তাহার জীবন-তৃষ্ণা চলিয়া যায়, সে দুঃখ হইতে মুক্ত হয়।—কারণ, দুঃখ কি?—ব্যক্তিগত অস্তিত্ব হইতেই দুঃখ উৎপন্ন হয়। আর, জন্ম, বাৰ্দ্ধক্য, রোগ, মৃত্যু প্রভৃতি ঘটনাগুলি লইয়াই আমাদের ব্যক্তিত্ব। আচ্ছা, এই সকল ঘটনায় কেন আমাদের দুঃখ উৎপন্ন হয়? কারণ, আমিরূপ বিভ্রম হইতেই আমাদের বাঁচিবার ইচ্ছা হয়, ভয় ও আকাঙ্ক্ষা উৎপন্ন হয়, জরা মৃত্যু প্রভৃতি দূরীকৃত করিয়া তাহার বিপরীত বিষয় লাভের অভিলাষ হয়। এই অস্তিত্বের অনুরাগ যদি আমাদের অন্তর হইতে নির্ম্মূল করিয়া ফেলিতে পারি; ইচ্ছা কর্ম্ম চিন্তা হইতে বিরত হইয়া পরি-