পাতা:ভারতবর্ষে.djvu/৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



ব্রাহ্মণ্যশাস্ত্রের মায়াবাদ ও অদ্বৈতবাদ।
৩৭

করে।’ ‘যিনি মনহীন, অথচ মনের অভ্যন্তরে অবস্থিত, যিনি প্রচ্ছন্ন অথচ সকলের মূলে বিরাজমান, তাঁহাতে চিত্ত নিমগ্ন কর, আত্মার সকল গ্রন্থি ছিন্ন হইয়া যাইবে।’ মন ও ইচ্ছা ধ্বংস হইলেই মায়ার সমস্ত ইন্দ্রজাল তিরোহিত হয়। ‘তখন আমরা ধূম-হীন অগ্নির ন্যায় প্রতীয়মান হইব, রথকে পরিত্যাগ করিয়া আরোহী যেরূপ রথের চক্রঘূর্ণন নিরীক্ষণ করে, আমরা তখন সেইরূপ হইব’—‘দুঃখ আমাদের অন্তরে আর থাকিতে চাহিবে না; যেব্যক্তি ব্রহ্মকে জানে, সে চিরশান্তি প্রাপ্ত হয়? যখন আমরা জানিলাম, আমরা সেই পূর্ণ জ্যোতিঃস্বরূপের স্ফুলিঙ্গ, তখন আর কে আমাদিগকে দুঃখ দিতে পারে? তখন আর এ কথা বলি না, ‘এই শরীরই আমি, কিম্বা আমি অমুক’, কিন্তু বলি, ‘আমিই ব্রহ্ম, আমিই জগৎ।’ তখন আর আমরা ‘গুণ-তরঙ্গে’ নায়মান বা বিচলিত হই না। ... ...

 “অতি সুক্ষ্ম আলোচনার প্রভাবে ব্রাহ্মণের মস্তিষ্ক দার্শনিক ঘূর্ণিরোগে আক্রান্ত; চিন্তার দ্বারা চিন্তার উচ্ছেদ—ইচ্ছার ধ্বংস সাধন, ইহা ত ব্রাহ্মণ্য দর্শনের প্রত্যক্ষ ফল। এই মায়াবাদের-প্রবণতা সেই আদিম বৈদিক যুগে আরম্ভ হইয়া তাহার ফল এতদূর পর্য্যন্ত গড়াইয়াছে। এই পরিণাম অবশ্যম্ভাবী। অন্যত্রও ইহার দৃষ্টান্ত দেখা যায়। একটি সমস্ত জাতি মায়াবাদে দীক্ষিত—ভারতবর্ষ ছাড়া আর কোথাও এরূপ দেখা যায় না বটে, কিন্তু যুরোপেও এরূপ ব্যক্তিবিশেষ মধ্যে মধ্যে দেখিতে পাওয়া যায় যাঁহারা হিন্দু-ভাবে অনুপ্রাণিত। ফ্রান্সে, আমাদের একজন বড় কবি, জাঁ লাহর, তিনি অজ্ঞাতসারে হিন্দু; তাঁহার ‘মায়া’ ও ‘নাস্তি’ বিষয়ক গ্রন্থে হিন্দুশাস্ত্রের ভাব জীবন্ত ভাবে লক্ষিত হয়। ইংলণ্ড, যেখানকার লোকেরা এমন সাহসী, এমন উদ্যমশীল, যেখানে আমিত্ব-ভাব এমন স্থায়ী ও বলবৎ, যেখানকার ধর্ম্ম হিব্রুধরণের একেশ্বরবাদ, সেখানেও