পাতা:ভারতবর্ষে.djvu/৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৮
ভারতবর্ষে।

হিন্দুপ্রাণ ‘শেলি’ উদিত হইয়াছেন। সমালোচকেরা স্পষ্টই দেখাইয়াছেন, শেলির অনেকটা বৈদিক ধরণের কল্পনা ছিল। ... ... তিনিও বৈদিক কবির ন্যায়, আপনাকে বহির্জগতে প্রক্ষিপ্ত করিয়াছেন; তাঁহার কবিতা,—সচল প্রকৃতির সচল প্রতিবিম্ব; যাহাতে ব্যক্তিত্বের অধিষ্ঠান উপলব্ধি হয় এরূপ হৃদয়-ভাব শেলির কবিতাতে বিরল; ‘আমি’ বলিয়া যে একটী অনুভূতি তাহা তাঁহার কবিতাতে অতি অল্পমাত্রায় লক্ষিত হয়। সকল সময়েই, তাঁহার হৃদয়ের উচ্ছ্বাস,—বহিঃপ্রকৃতির হৃদয়ের উচ্ছ্বাস। তাঁহার আত্মা প্রকৃতি হইতে স্বতন্ত্র নহে, পরন্তু প্রকৃতিতে ছড়াইয়া আছে। সুতরাং প্রকৃতির সকল পদার্থই তাঁহার নিকট প্রাণবিশিষ্ট, জীবন্ত, বোধবান, গতিশীল ও বিচিত্র রূপধারী। জগতের মূলে তিনি এমন এক আত্মা দেখিতে পান, আমরা যাহার চিন্তাস্বরূপ; যে আত্মা কীটের মধ্যে স্পন্দিত হইতেছে, ও তারকার মধ্যে দীপ্তি পাইতেছে; এমন একটি আত্মা—প্রকৃতি যাহার রহস্যময় পরিচ্ছদ; যাহা সমস্ত দৃশ্যমান পদার্থের মধ্যে প্রচ্ছন্নভাবে বর্ত্তমান, এবং যাহাকে কখন কখন, কোনও বিরল মুহূর্ত্তে, স্বচ্ছ আবরণ-মধ্যবর্ত্তী ম্লান দীপশিখার ন্যায় সুন্দর আকৃতির ভিতর দিয়া আমরা দেখিতে পাই। ‘শৃঙ্খলামুক্ত প্রমথ’ নামক তাঁহার কবিতাটি পাঠ করিয়া দেখ—যেখানে সমস্ত আত্মা, সমস্ত জীব, একতানে সম্মিলিত হইয়াছে, বিশেষতঃ যেখানে পৃথিবীর সহিত চন্দ্রের কথাবার্ত্তা চলিতেছে—সেই অংশটি পাঠ করিয়া, যে প্রাণ সকল পদার্থের মধ্য দিয়া প্রবাহিত—সেইবিশ্ব-প্রাণের অনন্ত উচ্ছ্বাসে কে না উন্মত্ত হইয়া উঠিবে? বিচিত্র শব্দ, বিচিত্র গন্ধ, বিচিত্র বর্ণ যাহা আমরা বাহিরে দেখি—সমস্তই ব্রহ্মের মায়া; এই মায়ামোহে কে না আচ্ছন্ন হইয়া পড়িবে? কিন্তু শেলি ইহার অধিক যান নাই; শান্ত, নির্গুণ ব্রহ্মকে তিনি দেখিতে পান নাই।