পাতা:ঘরোয়া.djvu/৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 সাত সাত ছেলে কর্তাদিদিমার; তাঁকে বলা হত রত্নগর্ভা। কর্তাদিদিমার সব ছেলেরাই কী সুন্দর আর কী রঙ। তাঁদের মধ্যে রবিকাকাই হচ্ছেন কালো। কর্তাদিদিমা খুব কষে তাঁকে রূপটান সর ময়দা মাখাতেন। সে কথা রবিকাকাও লিখেছেন তাঁর ছেলেবেলায়। কর্তাদিদিমা বলতেন, সব ছেলেদের মধ্যে রবিই আমার কালো।

 সেই কালো ছেলে দেখো জগৎ আলো করে বসে আছেন।

 কর্তাদিদিমা আঙুল মটকে মারা যান। বড়োপিসিমার ছোটো মেয়ে, সে তখন বাচ্ছা, কর্তাদিদিমার আঙুল টিপে দিতে দিতে কেমন করে মটকে যায়। সে আর সারে না, আঙুলে আঙুলহাড়া হয়ে পেকে ফুলে উঠল। জ্বর হতে লাগল। কর্তাদিদিমা যান-যান অবস্থা। কর্তাদাদামশায় ছিলেন বাইরে—কর্তাদিদিমা বলতেন, তোরা ভাবিস নে, আমি কর্তার পায়ের ধুলো মাথায় না নিয়ে মরব না, তোরা নিশ্চিন্ত থাক্।

 কর্তাদাদামশায় তখন ডালহৌসি পাহাড়ে, খুব সম্ভব রবিকাকাও সে সময়ে ছিলেন তাঁর সঙ্গে। তখনকার দিনে খবরাখবর করতে অনেক সময় লাগত। একদিন তো কর্তাদিদিমার অবস্থা খুবই খারাপ, বাড়ির সবাই ভাবলে আর বুঝি দেখা হল না কর্তাদাদামশায়ের সঙ্গে। অবস্থা ক্রমশই খারাপের দিকে যাচ্ছে, এমন সময়ে কর্তাদাদামশায় এসে উপস্থিত। খবর শুনে সোজা কর্তাদিদিমার ঘরে গিয়ে পাশে দাঁড়ালেন, কর্তাদিদিমা হাত বাড়িয়ে তার পায়ের ধুলো মাথায় নিলেন। ব্যস, আস্তে আস্তে সব শেষ।

 কর্তাদাদামশায় বেরিয়ে এলেন ঘর থেকে। বাড়ির ছেলেরা অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার যা করবার সব করলেন। সেই দেখেছি দানসাগর শ্রাদ্ধ, রুপোর বাসনে বাড়ি ছেয়ে গিয়েছিল। বাড়ির কুলীন জামাইদের কুলীন-বিদেয় করা হয়। ছোটোপিসেমশায় বড়োপিসেমশায় কুলীন ছিলেন, বড়ো বড়ো রুপোর ঘড়া দান পেলেন। কাউকে শাল-দোশালা দেওয়া হল। সে এক বিরাট ব্যাপার।

 
৬৫