পাতা:জোড়াসাঁকোর ধারে.djvu/৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৭২
জোড়াসাঁকোর ধারে

ভালো লোক ছিলেন, পাশে বসে আছেন। আর, মিনার্ভা থিয়েটারে ভালো সিন আঁকত, স্টেজ ডেকোরেশন করত, নামটা তার মনে পড়ছে না, আমিই তাকে রেকমেণ্ড করে দিয়েছিলুম, সেও আছে একপাশে বসে। কি একটা অভিনয় হল। অমৃত বোসকে বললুম, ‘দেখুন মশায়, আপনাদের অ্যাক্‌টর অ্যাকট্রেসরা সিংহাসনে বসবে, বসতেই জানে না, গড়গড়ার নলে টান দিতে পারে না। একটা স্টুডিয়ো করুন, যেখানে তারা এইসব শিখবে। উঠতে বসতে যারা জানে না, তার ‘প্লে’ করবে কি আবার?’ তিনি বললেন, ‘তা বলেছেন ভালো; এটা করতে হবে এবারে।’ অন্য আর-এক রাত্তিরে স্টার থিয়েটারে কি এক সিনে আর-এক আর্টিস্ট রাজসভার সিন এঁকে পিছনে ঝুলিয়ে দিয়েছে, বৃহৎ সভা, ঘরের থাম আসবাবপত্র কিছুই বাদ রাখেনি আঁকতে। এখন সেই সিনে রাজার সিংহাসন পড়েছে। রাজা বসলেন এসে সিনের পার্সপেক্‌টিভে যেখানে পাপোশটি রাখা আছে ঠিক সেইখানে একটা চৌকিতে। অতিরিক্ত পার্সপেক্‌টিভের ফল দেখো ছবিতে। রাজার স্থান হল পাপোশের জায়গায়।

 আর একবার এই রকম পার্সপেক্‌টিভের ধাঁধাঁয় পড়েছিলেম ছাত্রদের নিয়ে। নন্দলালরা তখন ছাত্র। আর্টস্কুলে আমি কাজ করি। রাশিয়া থেকে একটি মেম এল। বললে, ‘বুদ্ধের ছবি আঁকব, ঘর চাই একটা।’ ছবি আঁকবে ঘর চাই, তার কি করি। আর্টস্কুলে এখন তোমার দাদার যেটা ড্রইং রুম সেই ঘরটা ছেড়ে দিলুম। সে ঘরের চাবি চেয়ে নিল, বললে, একলা ঘরের দরজা বন্ধ করে নিশ্চিন্তমনে ছবি আঁকবে। আচ্ছা তাই হোক। মেমটি রোজ আসে, ছবি আঁকে, আমি মাঝে মাঝে যাই। উত্তরদিকের দেয়াল জুড়ে কাগজ সেঁটেছে। কাজের সময় ছাড়া বাদবাকি সময় পরদা টেনে ছবি ঢেকে রাখে। ছাত্রেরা কেউ যেতে পারে না কি হচ্ছে দেখতে। নন্দলাল বললে, ‘কী করে ড্রইং করে দেখতে চাই।’ মেমকে বললুম সে কথা, ‘আমার ছাত্রদের দেখাও একবার, কি করে তুমি ড্রইং কর। সে বললে, ‘আর কয়েকদিন বাদে আমার পেনসিল ড্রইং শেষ হয়ে যাবে, তখন দেখাব।’ কদিন বাদে খবর দিলে, ‘এবারে আসতে পারো।’ নন্দলালদের নিয়ে গেলুম। ছবির পরদা সরিয়ে দিলে। প্রকাণ্ড কাগজে বুদ্ধের সভা আঁকছে—ও মা, পার্সপেক্‌টিভ এমন করেছে, নিচে থেকে উপরে উঠে সেই কোথায় বুদ্ধদেব বসে আছেন নজরে পড়ে না। এ কি ছবি, এ কি পার্সপেক্‌টিভ? মেম বললে, ‘কারেক্ট্‌ পার্সপেক্‌টিভ হয়েছে।’ নন্দলাল বললে, ‘পার্সপেক্‌টিভের চূড়ন্ত হয়েছে, কিন্তু চিত্রের কিছু নেই এতে।’ পরে শুনি সেই