পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/১৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৪৪
বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী

করা যায় কি প্রক্রিয়ায় এবং কত রকম গহনা হয়, কত নাম তাদের,— এ সব কিছু নেই শিল্পশাস্ত্রের মধ্যে। প্রতিমা-লক্ষণ, প্রাসাদ-নিৰ্মাণ, কূপ-খনন, ইত্যাদি ইত্যাদি নানা কথা শিল্পশাস্ত্রে যেমন নানা অধ্যায়ে ভাগ করে লেখা রইলো, তেমন করে ভূষণ-শিল্প যেটা একটা খুব বড় art প্রাচ্য জগতের— তার হিসেব ধরা দরকারী বোধ হল না।

 এই যে সমস্ত সৌখিন শিল্প, তার উদ্ভাবনা ও গঠনের প্রক্রিয়া সমস্ত শিল্পীদের ঘরে অলিখিত অবস্থায় পিতা থেকে পুত্রে অর্সাতে চল্লো। এই সব বিচিত্র শিল্পের নানা আদর্শ বর্তমান রইলো কিন্তু তাদের প্রস্তুত করণের প্রক্রিয়া সমস্ত কত যে লোপ পেয়ে গেল তার ঠিক নেই। এই কারণে বলতেই হয় আমাদের শিল্পশাস্ত্র, শিল্পশাস্ত্র বলতে যা বোঝায় তা নয়, তাতে অঙ্গবিদ্যা হিসেবে আংশিকভাবে প্রসঙ্গক্রমে কোন কোন কলাবিদ্যার কথা বলা হয়েছে, ভারতশিল্পের প্রায় সাড়ে পনেরো আনা অংশের কথাই পাড়া হয়নি তাতে। এখন ধর্মের সঙ্গে শিল্পের আগেকার যোগ বিচ্ছিন্ন হতেই চল্লো, শিল্পের যে অনাদৃত দিক বিচিত্র দিক যা নিয়ে মানুষের জীবনযাত্রা সুন্দর হয়ে উঠলো মধুময় হয়ে উঠলো সেই দিকে মানুষের নজর পড়লো; ঘরের শিল্প আবার ঘরেই ফিরেছে পরের কাজ চুকিয়ে।

 শিল্পকে ধর্মের সঙ্গে জড়িয়ে না দেখে' শিল্পের দিক দিয়ে দেখা খুব অল্প দিন হ’ল ইউরোপে চলিত হয়েছে। প্রাচীনকালেও ভারতবর্ষে এই ভাবে শিল্পরসের দিক দিয়ে কলা সমস্তকে দেখা আলিঙ্কারিকগণ প্রচলিত করে গেছেন। শুধু কাব্যকলার সঙ্গে জড়িয়ে রাখলে অলঙ্কারশাস্ত্র রস-শাস্ত্র ইত্যাদি খুব কাজে আসবে না, অলঙ্কার-শাস্ত্রের বিচারপ্রণালী ধরে শিল্পবিদ্যা বুঝতে চল্লে ঢের বেশী ফল পাব আমরা। শিল্পের পুরাতত্ত্ব হিসেবে শিল্পশাস্ত্র কাযে লাগবে, প্রাচীনের সঙ্গে শিল্পশাস্ত্রের দিক দিয়ে এখনকার শিল্পীদের আংশিকভাবে যোগ ছাড়া বেশী কিছু হবে না; আমরা হাজার বছর আগে কত বড় শিল্পী ছিলেম এই ভাবের একটা ভূয়ো গর্বও লাভ হ’তে পারে—কিন্তু সে শুধু পড়ে যাওয়া বিদ্যা হবে শিল্পবোধ তাতে হবে না। রসের ও ভাবের প্রক্রিয়া ধরে' কবিতা ছবি মূর্তি এমন কি খেলনাটারও পরিচয় হ’ল ঠিক পরিচয়। বিদেশীয় রসিকেরা এই পথে কায করে চলেছেন অনেকেই।