পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/১৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



শিল্পীর ক্রিয়াকাণ্ড

“পৃথক্‌ পৃথক্ ক্রিয়াভিহি কলাভেদস্তু জায়তে”

    —শুক্রাচার্য্য।

 ক্রিয়ার ভেদে হ’ল নানারূপ কলা। কুমোর কাঠামোটায় যখন মাটি চাপিয়ে ক্রিয়া করে' গেল, তখন হ’ল ঠাকুর গড়া, আবার সে যখন ঢাকের উপরে মাটি চাপিয়ে গড়তে চল্লো তখন সে ক্রিয়ার ফলে হ’ল হাঁড়িকুঁড়ি। ধুনুরী তাঁতের যন্ত্রে ঘা দিয়ে তুলো ধুনে' চল্লো, সেই লোকই আবার আর একটা তারের যন্ত্রে অন্ত ক্রিয়া করে সুরের স্মৃষ্টি করলে। কামারের হাতুড়ি লোহাকে পিটে' ঠিক করে দিলে। ভাস্করের হাতুড়ি পেটার ক্রিয়া থেকে বার হ'য়ে এল অষ্টধাতুর এবং পাথরের দেবতা মানুষ হাতী ঘোড়া মন্দির মঠ ইত্যাদির নানা সাজ-সরঞ্জাম। ছবি লেখা হাতুড়ি চালানোর ফলে হয় না; কলম চালানো তুলি চালানোর ক্রিয়া জানা হ’ল তো ছবি হ’ল। আবার তুলি বুলিয়ে পাথর কাটা চল্লো না, সারং বাজিয়ে তূলো ধোনাও গেল না—যদিও কেউ কেউ সুর ধোনে বটে! ছবিটা লেখা, তাই অন্য লেখার সঙ্গে তার মিল লেখনীর দিকে। ছবি আঁকা দেখ তুলি দিয়েও চল্লো কলম দিয়েও হ’ল। জাপানে তারা কবিতা লিখলে, রসিদ লিখলে এবং ছবিও লিখলে একই তুলিতে। এটা দেখছি যে কতক শিল্পকর্ম বড় একটা যন্ত্রের খুঁটিনাটি অপেক্ষা না করেই সহজে সুনিষ্পন্ন হয়ে যায় আর কতক শিল্পকর্ম যান্ত্রিকভাবে নিম্পন্নই হ’তে চায়। শিল্পে যে উচ্চ নীচ ভেদ হয়েছে তা’ যান্ত্রিক ক্রিয়ার বাহুল্য ও তার অভাব নিয়ে। কুমোর তাঁতি এরা অনেকখানি যন্ত্রের ক্রিয়ার উপর নির্ভর করে' কায করে' যায়—না করে তার উপায় নেই—কিন্তু পুতুল গড়বার বেলায় কুমোরের বৌ শুধু হাতেই নানান খেলনা গড়ে' চলে। ক্রিয়া যেখানে যন্ত্রের দ্বারা না হ’লে হয়ই না সেখানে কর্মটা কলে যেন জলের মতে নিম্পন্ন হ’য়ে গেলেও তার যান্ত্রিকতা একেবারে সুস্পষ্ট বিদ্যমান থাকে। এর ঠিক উল্টো হয় উচ্চ অঙ্গের শিল্পে, ক্রিয়ার যান্ত্রিকতা সেখানে যেটুকু বা থাকে সেটা আন্তরিকতায় ঢাকা পড়ে' যায়।