পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/১৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শিল্পের ক্রিয়া প্রক্রিয়ার ভাল মন্দ
১৮৫

ভারত-শিল্প, তাই গড়ে' তোলার প্রকরণ অর্জনের যে আনন্দ তারি মধ্যে ভারতবর্ষ এবং ভারত-শিল্পের মূল যুক্ত হয়েছে বলেই গ্রীস মরে' গেল, ইজিপ্ট চলে' গেল, চীন তার চিরাগত প্রথা প্রকরণের পাঁচিলে বদ্ধ হয়ে মৃতপ্রায় হয়ে রইল যখন তখনো ভারতবর্ষ ভারত-শিল্প ইত্যাদি তৈলকটাহে দশরথের মৃতদেহ যে ভাবে ছিল সে ভাবে রইলো না, সে নতুন থেকে নতুনতর অর্জনের মধ্যে চলে বলে' বেঁচে রইলো। যুগ-যুগান্তরের অর্জন প্রথা প্রকরণ তাকে চেপে মারতে পারলো না, সে আনন্দের সঙ্গে ভাঙতে লাগলো গড়তে লাগলো সৃষ্টির জিনিস। ভারত-সভ্যতার এই বড় দিক,–এই দিক দিয়েই ভারত-শিল্পের মর্যাদা ও মহিমা। যেখানে সখ মিটলো লোকের নতুন নতুন দেখবার নতুন নতুন অর্জন করে' আনবার, সেইখানেই মরলো দেশের আর্ট ও আর্টের নানা প্রকরণ। আবার নতুনে সখ যেখানে নতুনের জন্য একটা বিপরীত উন্মাদনাতে পরিণত হ’ল সেখানেও মরলো শিল্প। এই দুই দিক বুঝে যে খেয়ালী চলে সে-ই consummate technique লাভ করে, এবং আর্টের খোঁজে চলতে পারে সাহসে বুক বেঁধে, না হ’লে খানিক চলে' সে ভয়ে মরে,—হয় পালিয়ে আসে চিরকেলে ঘরটায়, নয় তো গিয়ে আশ্রয় নেয় পরের দ্বারে অধম ভিক্ষুকের মতো। আর্টিষ্ট হ’তে পারা যায় যা হ’লে তার মধ্যে শাস্ত্রজ্ঞান অর্জনটাই একমাত্র উপায় নয়, অনেকগুলো অর্জন চাই অনেক দিক দিয়ে তবেই হয় আর্টিষ্ট; এটা স্পষ্টই বলা হয়েছে অলঙ্কার শাস্ত্রে-শক্তিনিপুণতা লোকশাস্ত্রে কাব্যাদ বেক্ষণাৎ, কাব্যজ্ঞশিক্ষয়া অভ্যাস ইতি হেতুসমুদ্ভবে। প্রথমে চাই শক্তি আর্ট সাধন করবার, তারপর নিপুণতা বা প্রকরণাদির উপর সম্পূর্ণ দখল, তারপর শাস্ত্র কাব্য ইত্যাদির আবেক্ষণ, নানা শিল্পের জিনিষের সঙ্গে সাক্ষাৎভাবে পরিচয়, তারপর গুরুর কাছে রীতিমত শিক্ষালাভ এবং অভ্যাস।

 শাস্ত্রের মধ্যে নানা উপদেশ লিপিবদ্ধ হ’ল কালে কালে, সেটা পড়ে' নিয়ে শাস্ত্রজ্ঞান পেয়ে গেলেন, কিন্তু আকাশে বাতাসে যে সব শিল্পের নানা প্রকরণ—রঙ দেবার প্রকরণ, আলো-ছায়ার রহস্যভেদ করার প্রকরণ—লেখা হচ্ছে দিনরাত, সেগুলোও ত পড়া চাই। লিখিত শিল্পশাস্ত্রের চেয়ে শিল্পীর সঙ্গে বেশী যোগ অলিখিত এবং নতুন নতুন করে' লিখিত শাস্ত্রের। কেবলি শাস্ত্রের মর্ম নয়