পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/১৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
১৮৮
বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী

 এইবার ছেলেদের জন্তে একটু কবিতা পড়ে দেখা যাক।

“আয়রে পাখী আয়
কালো জামা গায়
আসতে যেতে ঘুঙ্গুর বাজে আমার যাদুর পায়।”

কবির কোকিল আর নীতি-শিক্ষার গুণবান কোকিল কোনটা আসল কোকিল তা স্পষ্ট ধরা গেল,—একটা ছোট ছেলেও এটা বুঝে নিতে বিলম্ব করলে না কথা বলতে ও পড়তে শেখার আগে । প্রবৃত্তির ভেদে শুধু যে দুটো জিনিষকে দুই ছাচ দিলে তা নয়, ছয়ের মধ্যে সরস-নীরস আসল-নকল এমনি নানা ভিন্নতা দিলে।

 ছেলে-ভুলোনো ছড়ার বাধুনি এক রকম, ভারতচন্দ্রের কবিতার বঁধুনি অন্য; একজন নামজাদ কবি, অন্যজন এমন যে তার নামও কেউ জানে না অথচ কাব্য-রসে প্রবৃত্তি দুজনেরই—অতএব কাব্য-জগতে আর্ট হিসেবে দুজনের কাষের মধ্যে বঁধুনীর ভেদাভেদ ভাষার ভেদাভেদ ইত্যাদি নিয়ে উচ্চ-নীচ ভাল-মন্দ এ বিচার করা চলে না, দুজনকেই কবি বলে’ স্বীকার করতে হ’ল। দুজনের দুটো কবিতা পাশাপাশি রাখি—

“ভাল মালা গাঁথে ভাল মালিয়ারে
বনমালি মেঘমালি কালিয়ারে ।”
          (বিদ্যাসুন্দর)

“সায়মণির কোলে রতন মণি দেশলে’

কিংবা,

“দোলেরে মাল চন্দনী গোপাল"
          (ছেলে-ভুলোনো ছড়া)

এর কোন কবিকে প্রথম কাকে দ্বিতীয় কাকে তৃতীয় পুরস্কার দেবে রসিক বিচার করে ঠিক বলতে পারে না। ফুলের মালা, রতন হার, এবং ফুল চন্দনে মেশানো মালা এক শিল্প-প্রবৃত্তির থেকে তিনই রচ হ’ল কিন্তু ছাদ পেলে রুচি অনুসারে, বিভিন্ন রকমের মাল মসলা নিয়ে আর্ট রইল এক, আর্টের প্রকাশ হল বিভিন্ন ছাঁদে।

 নিজের প্রবৃত্তি অনুসারে সম্পূর্ণ স্বাধীন ভাবে চলার পথ আগলে রয়েছে লোকমত ধমৰ্মত রাজার হুকুম এমনি অনেক জিনিষ—তট যেমন আগল দেয়, ঝরণার বেগকে নিয়ন্ত্রিত করে চালায়, সেই ভাবের