পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/২৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জাতি ও শিল্প ૨૨ જ একদিকে যখন আমার দেশের পদ্মফুল কেবলি আউড়ে চল্লো দাশরথি রায়ের পদ্য আর ভ্রমরের পাচালী, অন্যদিকে হ’য়ে গেল আকাশ স্কটল্যাণ্ডের ব্লবেল ফুলের নীল স্বরে বিদেশিনীর চোখের প্রায় নীল, অথচ লোকে বল্লে ভালই হ’ল’, ‘ভালই হ’ল, ভাল হ’ল না একথা গোপনে কিন্তু লেখা হয়ে গেল যমরাজের দরবারে চিত্রগুপ্তের খাতায় । কাক এক কৌশলে বাসা বঁধেছে, বক স্বতন্ত্র রকমে বাধছে বাস । এই কৌশল নিয়ে কি কাকে বকে এজাত ওজাত বলে আপনাদের পরিচয় দিচ্ছে । কোকিল বাসা বাধেই না, কাকের বাসায় ডিম পাড়ে, অথচ তার সন্তান কোকিলই থাকে। আমাদের এই জাতিটা আগে তুলেটি নয় তালপাতায় সংস্কৃতে পুথি লিখতে, এখন লিখছে বিলাতি কাগজে বিলাতি শ্লেটে ইংরাজিতে,—এতেই রচনার জাতিপাত হ’ল এটা ভাবা ভুল । ঠীরের ধ1চাটা চেপটা কি গোল এ নিয়ে তার জাতিভেদ হয় না, তার জ্যোতির হিসেব ধরে হয় বিচার। রচনার প্রাণটি হচ্ছে আসল জিনিষ যা থেকে পরিচয় পাই এটি ভারতীয় না অ-ভারতীয় । মস্ত একটা সোলা টুপির মধ্যে আমাদের জাতীয় জীবন ধরা পড়ে পালিত হচ্ছে, তুলে নেই কথা নেই বুলনে নেই কপাটি খেলা নেই সরিষার তেল নেই ক্ষীরের ছাচ নেই, পুরোনে চুর্ষিকাঠির বদলে বেবি প্যাসিফায়ার ধরা হয়েছে তার জন্যে ; কিন্তু তবু তার ডাক যদি না সে বদলায়, সাড়া যদি ঠিক না দেয়, তবে জানবে সে জাত হারায় নি । জাতীয় ছবি মূর্তি কবিতা সবার ডাক আছে, সাড়াও আছে, সেই সাড়া নিয়ে তাদের জাতিভেদ ধরা পড়ে রসিকের কাছে । প্রাণে পূবের সাড়া পৌছোলো না পশ্চিমের, আজকের না কালকের, অথব৷ বতমান অতীতের সাড়া দিলে কি না এই নিয়ে জাত বিচার হয় রচনার। শিল্প বল, সাহিত্য বল, ধম কম যাই বল, সবার জাতীয়তা প্রাণের সাড়ার সঙ্গে যুক্ত, বাইরের ভৌতিক বা আধিভৌতিক জীবনযাত্রার সাজসরঞ্জামের ধূমধামের সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগ নেই। সোনাকে বিশেষ কোন একটা রূপ দিতে হ’লে ছাচে চালতে হয়, কিন্তু সেই ছাচের এমন গুণ নেই যে রূপোকে সোনা করে ; তেমনি জাতিকে বিশেষ একটা গঠন দিতে হ’লে জাতীয় শিক্ষার ছাঁচ দরকার, কিন্তু সেই ছাচকে কিছু সৃষ্টি করার স্বাভাবিক উপায় বলে ভুল করা