পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/৩৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
রূপের মান ও পরিমাণ

রসের আশ্রয় হ’ল রূপ—“অালম্বন সেই যাহে রসের আশ্রয়” ( —ভারতচন্দ্র ) । হাওয়ার রূপ নেই, কিন্তু অালম্বন-ভেদে বাতাসের স্বাদ ও গতির ভেদাভেদ স্থির করে নিই আমরা,—যেমন তালপাখার হাওয়া কুলোর বাতাস ইলেক্‌টিক ফ্যানের বাতাস চামরের বাতাস আঁচলের বাতাস বিলেতের হাওয়া ম্যালেরিয়ার হাওয়া উত্তর দক্ষিণ পূব পশ্চিম হাওয়া। রসশাস্ত্রকার তারা এই আশ্রয়ভেদ নিয়ে রসের ভেদ স্থির করে’ বল্লেন আদি করুণ ভয়ানক বীভৎস—এই প্রকার নয় রস । এই সব নানা রসের পাত্র তারা নানা রূপ এবং তাদের গড়ার বাধাধরা মাপজোখ শিল্পশাস্ত্রের মধ্যে পাওয়া যায় ; অঙ্কশাস্ত্রেও চতুষ্কোণ ত্রিকোণ দীর্ঘ হ্রস্ব বৃত্ত এমনি নানা রূপের সঠিক মাপ পাই আমরা । শাস্ত্রমতে রূপের আকার ও প্রকার হ’ল ষোল রকম—“রূপস্তু ষোড়শবিধম্", যথা—হ্রস্ব দীর্ঘ স্থল চতুরস্ৰ ইত্যাদি ইত্যাদি হ’ল আকারের মাপজোখ নিয়ে, আকার রঙের মান পরিমাণ নিয়ে প্রকারভেদ হ’ল, আকার হয়তে রইলো ঠিক, যথা—রক্ত আরক্ত পীত পাণ্ডু কৃষ্ণ নীলারুণ শুক্ল রজত,—তারপরে আবার বস্তুটির গুণাগুণ নিয়ে ভেদ হ’ল—দারুণ পিচ্ছল চিকণ মৃদ্ধ ইত্যাদি ইত্যাদি। একখানা লাল বনাতে একখানা লাল মখমলে সমান হ’ল ন স্পর্শে, একপাট সাদা খন্দরে একপাট সাদা সিন্ধে সমান হ’ল না লাবণ্যে ও স্পর্শে। একটা তালগাছে আর এক গাছা আখের ছড়ে সমান নয়, ডোলে মাপে যদিও দুইই দীর্ঘ। একই আকাশ কিন্তু দিনের আকাশে রাতের আকাশে সমান হ’ল না, রূপে গুণে রঙে ও স্পর্শে বিষম ভেদ রইলো এতে ওতে। রূপের বহিরঙ্গীন অংশের মাপ ডৌল থেকে স্থির করা গেল এবং দেখা গেল সেখানে দুটো এক মাপের ডৌল নেই— বর ও কন্যা রূপে গুণে ছুইজনে আলাদা আলাদা, এর ডোলে ওর ডোলে কোন মিল নেই। স্বভাবের নিয়মে সবাই আলাদা মান আলাদা ডোল পেলেম আমরা, বিয়ের মন্ত্র নিয়েও দু' হাত এক করা গেল না, দক্ষিণ ও বাম যে আলাদা সেই আলাদাই রইলো ।