পাতা:জয়তু নেতাজী.djvu/১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

৴৹

উপবাসের ধর্ম্মও নহে। এই ধর্ম্ম বিশেষভাবে বাঙালীজাতির জাতীয় সংস্কারে নিহিত থাকিলেও, ইহাতে সার্ব্বজনীন মানব-প্রকৃতির এমন একটি চিরন্তন সত্য স্বীকৃতি লাভ করিয়াছে, যে তাহাকেও ভারতীয় আদি-হিন্দুধর্ম্ম বা ‘সনাতন’-মানবধর্ম্ম বলা যাইতে পারে,―তাহার সেই মধ্যযুগীয় আবরণ ভেদ করিয়া এই ধর্ম্মই তাহাকে পুনঃপ্রকাশিত করিয়াছে। এইরূপে বাঙালীই, যে-ধর্ম্ম প্রকৃত হিন্দুধর্ম্ম―যাহা ব্যাসের সঙ্কলিত ‘মহাভারতে’ একটি সম্পূর্ণ রূপ ধারণ করিয়াছে―সেই ধর্ম্মকে পুনরুদ্ধার করিয়াছে। সেই ধর্ম্ম হইতেই বাঙালী একটা খুব বড় ‘nationalism’-এর অনুপ্রাণনা পাইয়াছে,―তান্ত্রিক অনার্য্য বাঙালীই আর্য্য ও অনার্য্যের মধ্যে মিলনের সেতু যোজনা করিয়া একটা নূতন ও বৃহত্তর মহাভারতের সূচনা করিয়াছে। তাহার সেই তান্ত্রিক শক্তিপ্রীতি ও বৈষ্ণব রস-সৃষ্টি―এই দুই মিলিয়া ঐরূপ ধর্ম্ম-প্রণয়নের সহায় হইয়াছে। সেই ধর্ম্ম একদিকে আর্য্যের শ্রেষ্ঠ ধর্ম্মতত্ত্ব―মহাভারতের সার-মর্ম্ম―গীতার সেই কর্ম্ম-সন্ন্যাস বা জীবন্মুক্তিবাদকে, এবং অপর দিকে অনার্য্যের ভোগবাদ বা জীবনসত্য-বাদকে মিলাইয়া একটি অপূর্ব্ব সমন্বয়মূলক জীবন-বাদের প্রতিষ্ঠা করিয়াছে; তাহাতে শক্তিরূপা প্রকৃতিই একাধারে ভক্তি ও মুক্তিদায়িনী হইয়াছে। তন্ত্রের সেই শক্তিপূজাকেই ভারতের স্বাজাত্য-সাধনায় প্রয়োগ করিয়া বাঙালী আধুনিক ভারতে এক নবধর্ম্মের শুরু হইয়াছে। এই মন্ত্রের আদি-স্রষ্টা―বঙ্কিমচন্দ্র; পরে স্বামী বিবেকানন্দ ও নেতাজী সুভাষচন্দ্রের মধ্যে ইহার স্ফুটতর ও পূর্ণতর অভিব্যক্তি হইয়াছে। আদি-কংগ্রেসের সহিত এই ধর্ম্মের সাক্ষাৎ সম্পর্ক ছিল না,―বঙ্কিম বা বিবেকানন্দ কেহই তৎপ্রতি আকৃষ্ট হন নাই―তাহার কারণ, উহার মূলে ভারতীয় প্রেরণা ছিল না; গান্ধী-কংগ্রেসও সুভাষচন্দ্রকে আকৃষ্ট করে নাই এই জন্য যে, সেই খাঁটি