পাতা:জয়তু নেতাজী.djvu/২৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৫৪
জয়তু নেতাজী

ছিল―যেন সুভাষের আদর্শ ও তাহাদের আদর্শে কোন পার্থক্য নাই, এমন কি, নেতাজীর সেই আজাদ-হিন্দ-ফৌজ ভারতের মুক্তিসংগ্রামের আদর্শ সেনা। পরে তাহা অস্বীকার করা হইয়াছে; তাহাতে মনে হয়, সে ছিল একটা সাময়িক প্রয়ােজনসিদ্ধি। ভারত স্বাধীন হওয়ার পর, আজাদ-হিন্দ-ফৌজের প্রতি যেরূপ ব্যবহার করা হইয়াছে তাহা ভাবিলে স্তম্ভিত হইতে হয়। সেই আজাদীফৌজের বিরুদ্ধেই, ব্রিটিশ গবর্নমেণ্টের বেতনভুক, ব্রিটিশভক্ত অর্থাৎ দেশদ্রোহী যে সৈন্য ও সেনানায়কেরা যুদ্ধ করিয়াছিল, স্বাধীন ভারত তাহাদিগকেই মাথায় করিয়া লইয়াছে, এবং আজাদ-হিন্দ-ফৌজকে সর্ব্বপ্রকারে অপমানিত করিয়াছে। ঐ একটি কার্য্যের দ্বারাই তাহারা নেতাজীকেও ভারতের রাষ্ট্র-জীবন হইতে বহিস্কৃত করিয়াছে।

 আর একটা ভুল-বিশ্বাস এখনও জনগণের মনে দৃঢ়মূল হইয়া আছে, তাহা এই যে, যেহেতু নেতাজী সুভাষচন্দ্র কথনও গান্ধীজির প্রতি শ্রদ্ধাহীন হন নাই, অতএব নেতাজী গান্ধী-মন্ত্রে বিশ্বাসী ছিলেন―তাঁহার পন্থা স্বতন্ত্র হইলেও গান্ধীই তাঁহার গুরু ছিলেন, এবং ঐ কংগ্রেসেরই তিনি অনুগত সেবক। এজন্য ঐ কংগ্রেসের প্রতি ভক্তি এবং নেতাজীর প্রতি শ্রদ্ধা, এই দুইয়ের মধ্যে কোন বিরোধ নাই। এই বিশ্বাস এমনই সহজ ও সুলভ যে, জনগণকে নিশ্চিন্ত করিবার ইহাই একটা বড় উপায় হইয়াছে। এইরূপ বিশ্বাস জন্মাইবার পক্ষে অনেক সুবিধাও আছে। দেশের যাবতীয় পত্র-পত্রিকায়এমন কি, নেতাজীর সম্পর্কে যত পুস্তক লিখিত হইয়াছে, তাহার অধিকাংশে (বিশেষতঃ বাংলা পুস্তক গুলিতে) সবচেয়ে বড় কথাটাই চাপা দেওয়া হইয়াছে―গান্ধী-কংগ্রেসের সহিত সুভাষচন্দ্রের সেই মূলগত বিরোধ, যে বিরােধের চূড়ান্ত প্রকাশ হইয়াছিল ত্রিপুরীতে।