পাতা:জয়তু নেতাজী.djvu/২৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পরিশিষ্ট
২৫৫

ঐ ত্রিপুরীর পর, সুভাষচন্দ্রের সহিত গান্ধী-কংগ্রেসের ষে আর কোন সন্ধি হয় নাই,―সেই যুদ্ধই ক্রমে নির্ম্মম ও কঠিন হইয়া উঠিয়াছিল বলিয়া সুভাষচন্দ্রকে দেশত্যাগ করিতে হইয়াছিল, এবং সেই বিরোধ যে শুধুই পন্থাগত বিরোধ নয়―মূলমন্ত্র বা আদর্শগত বিরোধ, ইহা কাহাকেও বুঝিবার অবকাশ দেওয়া হয় নাই। গান্ধীজির প্রতি সুভাষচন্দ্রের যে ভক্তি তাহা যে সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত, তাহার কারণও ভিন্ন—সে সংবাদ কেহ রাখে না। কিন্তু এইরূপ সাক্ষ্য-প্রমাণও নিম্প্রয়োজন; সুভাষচন্দ্র যে প্রথম হইতেই গান্ধীনীতির বিরোধী ছিলেন, এবং শেষে, কেবল ব্রিটিশ গবর্ণমেণ্টই নয়, ঐ গান্ধী-কংগ্রেসও তাঁহার প্রতিপক্ষ হইয়া দাঁড়াইয়াছিল, একথা যাহারা বুঝে না বা স্বীকার করে না, তাহারা সুভাষচন্দ্র সম্বন্ধে কোন কথাই বলিবার যোগ্য নহে। কারণ, যাহারা সুভাষচন্দ্রের ঐরূপ পরিচয় দেয় তাহারা তাঁহার সত্যটাকেই মিথ্যা করিয়া তোলে; গান্ধীবাদ ও গান্ধী-কংগ্রেসের প্রতি যাহাদের আন্তরিক আস্থা আছে, তাহারা সুভাষচন্দ্রের প্রতি কপট শ্রদ্ধাই নিবেদন করিতে পারে। যাহারা তাঁহার সেই মন্ত্র ও সেই পন্থাকে ভ্রান্ত ও অশুচি আখ্যা দিয়া, তাঁহার ত্যাগ ও বীরত্বের প্রশংসা করে―তাহারা কেবল দায়ে পড়িয়াই ঐটুকু স্বীকার করে, সত্যকার শ্রদ্ধা তাহাদের নাই। কারণ, সুভাষচন্দ্র কেবল একটা ব্যক্তি নয়, কোন একটা মতের প্রচারক মাত্র নহেন,―তাঁহার সমগ্র জীবন, তাঁহার দেহ, মন এবং আত্মা―সকলই একটা অখণ্ড সত্যের পূর্ণাঙ্গ অভিব্যক্তি; সত্য বলিয়াই তাহাকে খণ্ডিত করা যায় না। ঐরূপ পৃথক করিয়া দেখিলে সেই পুরুষকে অপমাণ করাই হয়।