পাতা:বিশ্বকোষ ঊনবিংশ খণ্ড.djvu/২৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

লাহোর যে প্রাচীর নিৰ্ম্মাণ করাইয়াছিলেন, তাহার কতকাংশ অস্থাপি বিদ্যমান আছে। মহারাজ রণজিৎসিংহ সেই প্রাচীরই বর্তমান প্রাচীরের মধ্যে গাথাইয়া লন। হিন্দু ও মুসলমানশিল্পের অসংখ্য নিদর্শন আকবর শাহের প্রতিষ্ঠিত লাহোর গে। বর্তমান দেখা যায়। বৰ্ত্তমান সময়ে যুগের স্থানবিশেষে পরিবৰ্ত্তন করিতে গিয়া তাহার কতকাংশ বিলোপ প্রাপ্ত হইয়াছে। মহাত্মা আকবর শাহের রাজ্যকালে লাহোর নগরে জনতার বৃদ্ধিসহকারে নগরের পরিসরও বৰ্দ্ধিত হয়। যেখানে ৰহসংখ্যক লোকের বসতি হইয়াছিল, তাহাই বৰ্ত্তমান লাহোর নগর বলিয়া খ্যাত রহিয়াছে। প্রাচীন নগর-প্রাচীরের বহির্ভাগস্থ বর্তমান জনশূন্ত প্রদেশে এক্ষণে স্ববৃহৎ বাজার এবং বহুলোকের বসতি হইয় একটা উপকণ্ঠ গঠিত হইতেছে। মোগল-সম্রাট জাহাঙ্গীর সময় সময় এখানে আসিয়া বাস করিতেন। তখন লাহোর নগর সমৃদ্ধিতে ভূষিত ছিল। এখানে থাকিয় তাহার পুত্র খুশ্রু পিতার বিরুদ্ধে অসি ধারণ করেন। জাহাঙ্গীরের রাজত্ব কালে “আদিগ্রন্থ"-সঙ্কলয়িতা শিখগুরু অর্জুনমল্ল এথানকার কারাবাসে থাকিয়া জীবন বিসর্জন করেন। মোগলরাজপ্রাসাদ ও রণজিৎ সিংহের ভজনমন্দিরের মধ্যস্থলে ধৰ্ম্মার্থ জীবনদানকারী ঐ শিখগুরুর সমাধিমন্দির বিদ্যমান রহিয়াছে। বাদশাহ জাহাঙ্গীর এখানকার সুপ্রসিদ্ধ খাবগা ( বিশ্রামনিকেতন ), মোতি মসজিদ ও আর্ণকালীর সমাধিমন্দির নিৰ্ম্মাণ করান। জাহাঙ্গীরের প্রাসাদ ইরাবতীতীরে অবস্থিত । শাহ দ্রা পল্লীতে নিৰ্ম্মিত জাহাঙ্গীরের ভজনাগার লাহোরের একট প্রধান ভূষণ। মুসলমান-রাজগণের ও শিখদিগের উপদ্রবে ঐ সুপ্রসিদ্ধ সমাধিভবন এক্ষণে ঐশ্ৰষ্ট হইয়া পড়িয়ছে। উক্ত মন্দিরের সমাধিস্থলের উপরিদেশে মৰ্ম্মর প্রস্তরনিৰ্ম্মিত যে সুপ্রসিদ্ধ গম্বুজ ছিল, বাদশাহ অরঙ্গজেব তাহা ভাঙ্গিয় স্থানাস্তরে লইয়া যান। জাহাঙ্গীরের প্রিয়তমা পত্নী নূরজঙ্গন ও শুালক আসফ খাঁর সমাধিমন্দিরের মৰ্ম্মর-প্রস্তরসমূহ এবং নানা বর্ণের মীনার শিল্পকারুসমূহ শিখদিগের দ্বারা লুষ্ঠিত হওয়ায় উহ সৰ্ব্বতোভাবে শ্রীহীন হইয়া রহিয়াছে। উপরোক্ত জাহাঙ্গীর-প্রাসাদের পাশ্বদেশে তৎপুত্র শাহজহান বাদশাহ অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্রাকার আর একট প্রাসাদ নিৰ্ম্মাণ | করাইয়াছিলেন। এখন ঐ প্রাসাদের শিল্পশোভা বিদ্যমান আছে । উহার মৰ্ম্মর প্রস্তরগুলির উপর এক প্রকার কঠিন চুণকাম আচ্ছাদিত থাকায় শিখগণ ভ্ৰমে পতিত হইয়া সেই মৰ্ম্মরগুলি উঠাইয়া লষ্টতে পারে নাই। উক্ত সম্রাট, “খাব গা” প্রাসাদের বামপাশ্বে বারিকের স্থায় সুদীর্ঘ অট্টালিকাশ্রেণী [ २¢२ ] লাহোর নিৰ্ম্মাণ করাইয়াছিলেন। উহার মধ্যভাগে ‘সমান বুরুজ নামে একটী অষ্টকোণ তুর্গ আছে। তাহার মধ্য প্রাঙ্গণের বিস্তৃত চাদনী নানা মূল্যবান প্রস্তরে খোদিত পুষ্পমালাদি শিল্পচাতুৰ্য্যে পূর্ণ। উহা নয় লক্ষ টাকা ব্যয়ে নিৰ্ম্মিত হইয়াছিল বলিয়া সাধারণে “নেীলাখ” মামে প্রসিদ্ধ। উহারই পার্থে “শিদ মহল” নামক প্রাসাদাংশ। মহারাজ রণজিৎসিংহ ঐ স্থানে বলিয়া বৈদেশিক ও সামন্তরাজগণকে অভ্যর্থনা অথবা তাহদের প্রেরিত দূতদিগের সহিত সাক্ষাৎ করিতেন। ঐ গৃহে বসিয়াই তাহার পুত্র দলীপ সিংহ ইংরাজ-গবমেন্টের হস্তে পঞ্জাবের রাজ্যভার সমৰ্পণ করিয়াছেন । এই কারণে উহ। ইংরাজের বিশেষ আদরের জিনিষ হইয়াছে। - অরঙ্গজেবের চিরপ্রসিদ্ধ অত্যাচারে উৎকণ্ঠিত হইয়া লাহোরবাসী ক্রমশঃ নগর ছাড়িয়া পলায়ন করে। র্তাহার রাজ্যাধিকারের পূৰ্ব্বে জাহানাবাদ ( বর্তমান দিল্লী) নগর স্থাপনকালেও কতক (রাজকৰ্ম্মচারী ও রাজামুগৃহীত ব্যক্তি) লাহোর নগর শূন্ত করিয়া তথায় যাইয়া বাস করে । জাহানাবাদ-প্রতিষ্ঠার পর মোগলসম্রাট গণ প্রায়ই লাহোর-রাজধানীতে পদার্পণ করিতেন না, সুতরাং সম্রাটের স্থানত্যাগে এই নগরের ভাবী উন্নতির আশা কম জানিয়া ধীরে ধীরে অনেক নগরবাসীই লাহোর ত্যাগ করিতে বাধ্য হইয়াছিলেন । ১৮৪৬ খৃষ্টাব্দে লাহোর নগরে ইংরাজরাজের Council of Rege.cy সভা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৮৪৯ খৃষ্টাব্দে মহারাজ দলীপ সিংহ ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানীর হস্তে পঞ্জাবের শাসনভার অর্পণ করিয়া রাজসিংহাসন ত্যাগ করেন । তদবধি লাহোর ইংরাজাধিকৃত পঞ্জবপ্রদেশের রাজধানীরূপে গণ্য হইয়া আসিতেছে। পক্ষান্তরে ইংরাজরাজপুরুষগণও এখানকার শ্ৰীবৃদ্ধিসাধনে যত্নশীল হইয়া ক্রমশঃ নগরভাগের উন্নতি বিধান করিতেছেন । ১৮৪৯ খৃষ্টাব্দে ইংরাজাধিকারে আসিবার পরও এই নগরের চতুষ্পার্শ্ববর্তী স্থান ভগ্ন অট্টালিকার স্ত,পরাশিতে পরিব্যাপ্ত ছিল। পূৰ্ব্বতন যুরোপীয়দিগের বাসগৃহ নগরের দক্ষিণস্থ নিম্নভূমে প্রাচীন গোরাবাজারের চারিদিকে ব্যাপ্ত ছিল । পরে ক্রমশঃ উহ! পূৰ্ব্বমুখে বিস্তৃত হয় এবং যে স্থান পূৰ্ব্বে ধ্বস্তপ্রায় অট্টালিকায় ও জঙ্গলে সমাচ্ছাদিত ছিল, ক্রমে সেই সকল স্থান নানাবিধ সৌধমালায় সমাচ্ছন্ন হইয় পড়ে। তদনন্তুর প্রতি ৰৎসরে নুতন অট্টালিকাদি ৰিনিৰ্ম্মিত হইয়া নগরের নুতন ঐসম্পাদন করিতেছে । বর্তমান লাহোর নগর প্রায় ৬৪০ একর জমি লষ্টয়া ব্যাপ্ত আছে। উহা পূৰ্ব্বে প্রায় ৩৯ ফিট, উচ্চ ইষ্টকপ্রাচীরে পরি