পাতা:বিশ্বকোষ পঞ্চম খণ্ড.djvu/৫৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোয়ালিয়ার [ 66૧ ] গোয়ালিয়ার কিন্তু ইহার প্রধান দুর্গদ্বার ২৭৪ ফিট উচ্চ। এই চুর্গের অধোদেশে উত্তরাংশে প্রাচীন গোয়ালিয়ার নগর, এবং দক্ষিণাংশে প্রায় এক মাইল দূরে নূতন গোয়ালিয়ার বা লস্কর নগর অবস্থিত । দুর্গের দক্ষিণাংশে যেখানে দৌলত রায় সিন্ধিয়া আসিয়া প্রথমে স্কন্ধাবার স্থাপন করেন, সেই স্থানে লস্কর অর্থাৎ স্কন্ধাবার নামে খ্যাত হয় । সিন্ধিয়া এইখানেই প্রধান নগর স্থাপন করেন। দিন দিন ইহার উন্নতির সহিত পুরাতন গোয়ালিয়ারের সমুদ্ধি হ্রাস হইতে খাকে । যাহাহউক এই দুইট নগর একত্র ধরিলে ভারতের মধ্যে একটী বহু জনাকীর্ণ প্রধান নগর বলিয়া স্থির করা যায়। এখানে মোট ইলক্ষ লোকের বাস এবং প্রায় পয়ত্রিশ হাজার গৃহ আছে । এখানে অনেক দেখিবার জিনিস আছে। হিন্দু ও জৈন শিল্পনৈপুণ্যের জন্ত বহুদিন হইতে এই স্থান প্রসিদ্ধ। দুর্গে প্রবেশ করিতে হইলে ৬টী বৃহৎ তোরণ পার হইতে হয়। এই তোরণের নাম আলমগিরিপুর, বাদলগড বা ছিন্দোলাপুর, ভৈরো বা বাসোরপুর, গণেশপুর, লক্ষ্মণপুর ও হাতিয়াপুর। দুর্গের সর্বনিম্ন তোরণের নাম আলমগিরি। ১৬৬• খুষ্টাব্দে অরঙ্গজেবের নামানুসারে মোতামিদখা এই দ্বার প্রস্তুত করেন । র জ। কল্যাণমলের ভ্রাতা বাদলসিংহের নামানুসারে । বাদলগড় স্থাপিত হয়। তৎপরে এখানে বিস্তর হিন্দোলপক্ষী দেথা যাইত বলিয়া ইহার হিন্দোলাপুর নাম হইয়াছে । খঙ্গরায়ের মতে পুৰ্ব্বকালে ভৈরবপাল নামে একজন কচ্ছবাহরাজ গোয়ালিয়ারে রাজত্ব করিতেন, তিনি নিজ নামে ভরে দ্বার নিৰ্ম্মাণ করেন। মরাঠার অধীনে একব্যক্তি বংশ যষ্ঠী হস্তে এইস্থান রক্ষা করিত বলিয়া ইহার বাসোরপুর न{म श्ध्न । ১৪২৪ হইতে ১৪৫৪ খৃষ্টাব্দে রাজা দুঙ্গড়সিংহ কর্তৃক গণেশপুর দ্বার নিৰ্ম্মিত হয়। এই দুর্গের বাহিরে মুরসাগর নামে একটা সরোবর আছে, ১৬৬৭ খৃষ্টাব্দে মোতামিদুর্থী ইহার সংস্কার করাইয়াছিলেন। গণেশদ্বারের ভিতর খালিপা সিদ্ধের একট ক্ষুদ্র মন্দির আছে। পূৰ্ব্বে যেখানে শ্বালিপাসিদ্ধের মন্দির ছিল, মোতামিদখা সেই মন্দির ( ১৯৭৫ হিজিরায়) ধ্বংস করিয়া তাহার উপর মসজিদ নিৰ্ম্মাণ করাইয় দেন, সেই মসজিদে একখানি পারসী শিলালিপিতে এ সকল কথা লিখিত অাছে । লক্ষ্মণপুরদ্বায়ে যাইবার পথে একটা ক্ষুদ্র ‘চতুভূজ মন্দির” V S8o আছে । এই মন্দিরে গোপগিরিস্বামী ভোজদেবের রাজত্ব কালে ৯৩৩ সম্বতে উৎকীর্ণ একখানি বৃহৎ শিলালিপি দৃষ্ট হয়। ফজলআলি লিথিয়াছেন—কচ্ছবাতবংশীয় ১৭শ রাজা লক্ষ্মণপাল এই ফটক নিৰ্ম্মাণ করিয়াছিলেন । সুস্থানিয়া হইতে প্রাপ্ত কচ্ছবাহরাজ বন্দোমার শিলালিপি পাঠে জানা যায় যে, তাহার পিতার নাম লক্ষ্মণ ছিল, বোধহয় এই লক্ষ্মণের নামাকুসারে তৎপুত্ৰ ঋজদামী কর্তৃক ঐ দ্বায় নিৰ্ম্মিত হইয়া থাকিবে। লক্ষ্মণ ফটকের উপরে একস্থানে অনেকগুলি শিবলিঙ্গ, হরগেীবী, গণেশ প্রভৃতির পাযাণমূৰ্ত্তি দেখা যায়। তন্মধ্যে ১৫ ফিট উচ্চ এক বৃহৎ বরাহ অবতারের মূৰ্ত্তি পড়িয়া আছে। এখানকার ভাস্কর কার্য্য দেখিলেই অতি প্রাচীন বলিয়া বোধ হয়। গোয়ালিয়াররাজ মানসিংহ হাতিয়াপুর দ্বার নিৰ্ম্মাণ করাইয়াছিলেন। এখানে এক পূর্ণায়তন হস্তীমূৰ্ত্তি, তাহার পৃষ্ঠের উপর সম্মুখভাগে মাহুত ও পশ্চাতে রাজা মানসিংহের সমাসীন মূৰ্ত্তিও ছিল। সম্রাট বাবর, আবুল ফজল প্রভৃতি ঐ মূৰ্ত্তির বিশেষ প্রশংসা করিয়া গিয়াছেন। এই হার্তার মূৰ্ত্তি হইতে হাতিয়াপুর নাম হইয়াছে। এখন আর সেই হাতী মূৰ্ত্তির চিহ্ন নাই। সম্ভবতঃ মোতামিধর্থ উহার ধ্বংস সাধন করেন । এই ফটকট মামসি’ছ-নিৰ্ম্মিত মানমন্দিরের অংশ । মানমন্দিরের শিল্পনৈপুণ্য এত সুন্দর ও চমৎকার, যে সমস্ত উত্তর ভারতে এরূপ অতি বিরল। দুর্গের উত্তর পশ্চিমাংশের প্রবেশ দ্বারে তিনট ফটক আছে, এই দ্বারের নাম দুটিপুর । এখানে মানসিংস্থপ্রতিষ্ঠিত ঢুণ্টিদেবের এক প্রাচীন মন্দির অাছে। এই মন্দির ইষ্টতে এই দ্বারের নাম হইয়াছে, কিন্তু মানসিংহেয় পূৰ্ব্বেও এই দ্বার ছিল, তাছা এখানকার ১৫০৫ সম্বতে উৎকীর্ণ শিলালিপি দ্বারা জানা যায় । দুর্গের দক্ষিণপশ্চিমে মানসিংহনিৰ্ম্মিত ঘরগঞ্জপুর দ্বার। এখানেও কতকগুলি পাষাণময় দেবমূৰ্ত্তি পড়িয়া আছে । গোয়ালিয়ারের তুল্য দুর্ভেদ্য দুর্গ বোধ হয় উত্তরভারতে আর নাই। কালপুর ও অজয়গড়ের দুর্গ দুর্ভেদ্য বলিয়া বিখ্যাত বটে, কিন্তু তাহান্তে ও বহুদিন অবরোধে জলাভাব ঘটয়ছিল, কিন্তু গোয়ালিয়ার দুর্গে কথন জলাভাব ঘটে নাই, কখন ঘটিবার সম্ভাবনাও নাই । [ মোরার দেখ। ] গোয়ালিয়ার দুর্গ মধ্যে এই কয়ট প্রাসাদ আছে—করণমন্দির, মানমন্দির, গুজারণিমন্দির, বিক্রমমন্দির, শেরমন্দির বা জাহাঙ্গিরী মহাল ও শাহজাহানমন্দির * । • এছাড়া আরও কতকগুলি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রাসাদ আছে। প্রধান গ্রাসাদগুলি নিৰ্ম্মাণকাল গোরালিয়ার ইতিহাস প্রসঙ্গে অবধারিত হইয়াছে।