পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অপরাজিত o অপুর চেহারা বদলাইয়া গিয়াছে। অন্ত ধরণের জামা গায়ে—কি মুন্ধর মানাইয়াছে। সর্বজরা বলে, বেশ জামাটা—এবার বুঝি কিনেচিম ? : মা'র দৃষ্টি আকৃষ্ট হুইয়াছে দেখিয়া অপু খুব খুশী । মোটা ভাল করিয়া দেখাইয়া বলিল —সবাই বলে জামাটার রং চমৎকার হয়েচে–চাপাফুলের মত হবে ধুয়ে এলে--এই তো মোটে কোর । বোর্ডিং-এ গিয়া অপু এই কয় মাস মাস্টার ও ছাত্রদের মধ্যে যাহাকেই মনে মনে প্রশংসা করে, কতকটা নিজের জ্ঞাতসারে কতকটা অজ্ঞাতসারে তাঁহারই হাবভাব, কথা বলিবার ভঙ্গি নকল করিয়াছে। সত্যেনবাবুর, রমাপতির, দেবব্রতের, নতুন আঁকের মাস্টারের! সর্বজয়ার যেন অপুকে নতুন নতুন ঠেকে। পুরাতন অপু যেন আর নাই। অপু তো এ রকম মাথা পিছনের দিকে হেলাইয়া কথা বলিত না ? সে তো পকেটে হাত পুরিয়া এ ভাবে সোজা হইয়া দাড়াইত না ? সন্ধ্যার সময় মায়ের রাধিবার স্থানটিতে অপু পিড়ি পাতিয়া বসিয়া গল্প করে। সর্বজয়ী আজ অনেকদিন পরে রাত্রে রণধিতে বসিয়াছে —সেখানে কত ছেলে একসঙ্গে থাকে ? এক ঘরে ক'জন ? দু’বেলাই মাছ দেয় । পেট ভরিয়া ভাত দেয় তো ? কি থাবার খায় সে বৈকালে ? কাপড় নিজে কাচিতে হয় ? সে তাহ পারে তো!—পড়াশুনার কথা সর্বজয় জিজ্ঞাসা করিতে জানে না, শুধু খাওয়ার কথাই জিজ্ঞাসা করে। অপুর হাসিতে, ঘাড় দুলুনিতে, হাত-পা নাড়াতে, ঠোটের নিচের ভঙ্গিতে সর্বজয়া আবার পুরানো অপু, চিরপরিচিত অপুকে ফিরিয়া পায়। বুকে চাপিতে ইচ্ছা করে। সে অপুর গল্প শোনে না, শুধু মুখের দিকেই চাহিয়া থাকে। —হাতে পারে বল পেলাম মা, এক এক সময় মনে হ’ত—অপু ব’লে কেউ ছিল না, ও যেন স্বপ্ন দেখিচি, আবার ভাবতাম—ন, সেই চোখ, টুকটুকে ঠোট, মুখের তিল—স্বপ্ন নয়, সত্যিই তেী—রাধতে বসেও কেবল মনে হয় মা, অপুর আসা স্বপ্ন হয় তো, সব মিথ্যে—তাই কেবল ওর মুখেই চেয়ে ঠাউরে দেখি– - অপু চলিয়া যাইবার কয়েকদিন পরে সর্বজয়া তেলিগিরির কাছে গল্প করিয়াছিল। পরদিনটাও অপু বাড়ি রহিল। যাইবার সময় মাকে বলিল—ম, আমাকে একটা টাকা দাও না ? কতকগুলো ধার আছে এ মাসে, শোধ করব, দেবে ? সর্বজয়ার কাছে টাকা ছিল না, বিশেষ কখনও থাকে না। তেলিরা ও কুণ্ডুর জিনিসপত্রট, কাপড়খানা, সিধাটা—এই রকমই দিয়া সাহায্য করে। নগদ টাকাকড়ি কেহ দের না। তবু ছেলের পাছে কষ্ট হয় এজন্ত সে তেলিগিরি নিকট হইতে একটা টাকা ধার করিয়া আনিয়া ছেলের হাতে দিল । সন্ধ্যার আগে অপু চলিয়া গেল, ক্রোশ দুই দূরে স্টেশন, সন্ধ্যার পরেই ট্রেন।