পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

సిe বিভূতি-রচনাবলী বুঝতে তে পারছে না সেখানকার কাগুকারখানা ! বয়লারের গরম, হাওয়া নেই, দম বন্ধ হয়ে আসবে—চার শভেল কয়লা দিতে না দিতে হাতের শিরা দড়ির মত ফুলে উঠবে— আর তাতে ওই ডেলিকেটু হাত—ইপি জিরুতে দেবে না, দাড়াতে দেখলে ইঞ্জিনিয়ার সাহেব মারবে চাবুক—দশ হাজার ঘোড়ার জোরের এঞ্জিনের টিম বজায় রাখতে হবে সব সময়, নিঃশ্বাস ফেলবার সময় পাবে না—আর গরম কি সোজা ! কুম্ভীপাক নরকের গরম ফর্ণেসের মুখে ! সে তোমাদের কাজ ?... তবুও দু'জনে ছাড়ে না। ইহারা যে বাড়ি হইতে পালাইয়া যাইতেছে, সে ধারণ বাবুটির আরও দৃঢ় হইল। বললেন, —নাম ঠিকানা দিয়ে যাও তো তোমাদের বাড়ির। দেখি তোমাদের বাড়িতে না হয় নিজে একবার যাব । কোনো রকমেই র্তাহীকে রাজী করাইতে না পারিয়া অবশেষে তাহারা চলিয়া আসিল । অষ্টম পরিচ্ছেদ একদিন অপু দুপুরবেলা কলেজ হইতে বাসায় ফিরিয়া আসিয়া গায়ের জামা খুলিতেছে, এমন সময় পাশের বাড়ির জানালাটার দিকে হঠাৎ চোখ পড়িতে সে আর চোখ ফিরাইয়া লইতে পারিল না । জানালাটির গায়ে খড়ি দিয়া মাঝারি অক্ষরে মেয়েলি ছাদে লেখা আছে— ‘হেমলতা আপনাকে বিবাহ করিবে। অপু অবাক হইয়া খানিকট সেদিক চাহিয়া রছিল এবং পরক্ষণেই কৌতুকের আবেগে হাতের নোটখাতাখানা মেঝেতে ছুড়িয়া ফেলিয়া আপন মনে হো-হো করিয়া হাসিয়া উঠিল। পাশেই বাড়ি—তাহার ঘরটা হইতে জানালাটা হাত পাঁচ ছয় দূরে—মধ্যে একটা সরু গলি ! অনেকদিন সে দেখিয়াছে, পাশের বাড়ির একটি মেয়ে জানালার গরাদে ধরিয়া এদিকে চাহিয়া আছে, বয়স চৌদ্ধ-পনেরো। রং উজ্জল শুমবর্ণ, কোকৃড়া কোকৃড়া চুল, বেশ মুখখান, যদিও তাহাকে সুন্দরী বলিয়া কোনদিনও অপুর মনে হয় নাই। তাহার কলেজ হইতে আসিবার সময় হইলে প্রায়ই সে মেয়েটিকে দাড়াইয়া থাকিতে দেখিত। ক্রমে শুধু দাড়ানো নয়, মেয়েটি তাহাকে দেখিলেই হঠাৎ হাসিয়া জানালার আড়ালে মুখ লুকায়, কখনও বা জানালাটার খড়খড়ি বারকতক খুলিয়া বন্ধ করিয়া মনোযোগ আকর্ষণ করিতে চেষ্টা করে, দিনের মধ্যে দু'বার তিনবার, চারবার কাপড় বদলাইয়া ঘরটার মধ্যে অকারণে ঘোরাফেরা করে এবং ছুতানাতায় জানালার কাছে আসিয়া দাড়ায়। কতদিন এরকম হয়, অপু মনে মনে ভাবে—মেয়েটা আচ্ছা বেহায়া তো! কিন্তু আজকের এ ব্যাপার একেবারে অপ্রত্যাশিত। আজ ও-বেলা উড়ে ঠাকুরের হোটেলে খাইতে গিয়া সে দেখিয়াছিল, স্বন্দর ঠাকুর মুখ ভার