পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

నశి বিভূতি-রচনাবলী মেয়েটি বলিল—করবো। কথা শেষ করিয়া সে হাসির ফেলিল। অপু বলিল,—কি জাত তোমরা—বামুন –আমি কিন্তু বামুন। মেয়েটি খোপায় হাত দিয়া একটা কাটা ভাল করিয়া গুজিয়া দিতে দিতে বলিল— আমরাও বামুন –পরে হাসিয়া বলিল-আমার নাম তো জেনেছেন, আপনার নাম কি ? অপু বলিল, ভাল নাম অপূর্ব, আমরা বাঙ্গাল দেশের লোক-শহরের মেয়ে তোমরা— আমাদের তো দু'চোখে দেখতেই পারে না—তাই না ? তোমায় একটা কথা বলি শোন । ...ওরকম লিখো না জানালার গায়ে—যদি কেউ টের পায় ? মেয়েটি আর একবার পিছন ফিরিয়া চাহিয়া বলিল, কে টের পাবে ? কেউ দেখতে পায় ন। ওদিক থেকে—আমি যাই, কাকীমা আসবে ঠাকুরঘর থেকে। আপনি বিকেলে রোজ থাকেন ? মেয়েটি চলিয়া গেলে অপুর হাসি পাইল। পাগল না তো? ঠিক—এতদিন সে বুঝিতে পারে নাই.. মেয়েটি পাগল ! মেয়েটির চোখে তাই কেমন একটা অদ্ভুত ধরণের দৃষ্টি। কথাটা মনে হুইবার সঙ্গে সঙ্গে একটা গভীর করুণা ও অমুকম্পায় তাহার সারা মন ভরির গেল। মেয়ের বাপকে সে মাঝে মাঝে প্রায়ই দেখে—প্রৌঢ়, খোচা খোচা দাড়ি, কোন অফিসের কেরানী বোধ হয়। সে কলেজে যাইবার সময় রোজ ভদ্রলোক ট্রামের অপেক্ষায় ফুটপাথের ধারে দাড়াইয়া থাকেন। হয়ত মেয়েটির বাবাই, নয়ত কাকা বা জ্যাঠামশায়, কি মাম—মোটের উপর তিনিই একমাত্র অভিভাবক। খুব বেশী অবস্থাপন্ন বলিয়া মনে হয় না। হয়ত তাহাকে দেখিয়া মেয়েটা ভালবাসিয়া ফেলিয়াছে—এ-রকম তো হয় | তাহার ইচ্ছা হইল, এবার মেয়েটিকে দেখিতে পাইলে তাঁহাকে দুটা মিষ্ট কথা, দুটা সাত্বনার কথা বলিবে। কেহ কিছু মনে করিবে ? যদি নিতাইবাবুটের পায় ?—পায় পাইবে। খবরের কাগজে সে মাঝে মাঝে ছেলে-পড়ানোর বিজ্ঞাপন খুজিত, একদিন দেখিল কোন একজন ডাক্তারের বাড়ির জন্য একজন প্রাইভেট টিউটর দরকার। গেল সে সেখানে । দোতলা বড় বাড়ি, নিচে বৈঠকখানা কিন্তু সেখানে বড় কেহ বসে না, ডাক্তারবাবুর কনসালটিং রুম দোতলার কোণের কামরায়, সেখানেই রোগীর ভিড়। অপু গিয়া দেখিল, নিচের ঘরটাতে অনুন জন-পনেরো নানা বয়সের লোক তীর্থের কাকের মত ই করিয়া বসিয়া—সেও গির একপাশে বসিয়া গেল। তাহার মনে মনে বিশ্বাস ছিল, ঐ বিজ্ঞাপনটা শুধু তাহারই চোখে পড়িয়াছে—এত সকালে, অত ছোট ছোট অক্ষরে এককোণে লেখা বিজ্ঞাপনট-সে ভাবিয়াছিল—উ...এ যে ভিড় দেখা যায় ক্রমেই বাড়িয়া চলিল । কাহাকে পড়াইতে হইবে ; কোন ক্লাসের ছেলে, কত বড়, কেহই জানে না। পাশের একটি লোক জিজ্ঞাসা করিল—মশাই জানেন কিছু, কোন ক্লাসের— অপু বলিল, সেও কিছুই জানে না। একটি আঠারো উনিশ বছরের ছোকরার সঙ্গে অপুর আলাপ হইল। ম্যাট্রিকুলেশন ফেল করিয়া হোমওপ্যাথিক পড়ে, টিউশনির নিতান্ত দরকার,