অপরাজিত సినీ ন হইলেই চলিবে না, লে নাকি কালও একবার জাসিয়াছিল, নিজের ঘরবস্থার কখা সব কর্তাকে জানাইয়া গিয়াছে, তাহার হইলেও হইতে পারে ঘন্টাখানেক ধরিয়া অপু দেখিতেছিল, কাঠের সিড়িটা বাহিয়া এক-একজন লোক উপরের ঘরে উঠতেছে এবং নামিবার সময় মুখ অন্ধকার করিয়া পাশের দরজা দিয়া বাহিরে চলিয়া যাইতেছে। যদি তাহারও না হয় । পড়া বন্ধ করিয়া মনসাপোতা—কিন্তু সেখানেই বা চলিবে কিসে? চাকর আসিয়া জানাইল, আজ বেলা হইয়া গিয়াছে, ডাক্তারবাবু কাহারও সঙ্গে এখন আর দেখা করিবেন না। এক-একথানা কাগজে সকলে নিজের নিজের নামধাম ও যোগ্যতা লিখিয়া রাখিয়া যাইতে পারেন, প্রয়োজন বুঝিলে জানানো যাইবে। ছেদো কথা। সকলেই একবার ডাক্তারবাবুর সঙ্গে দেখা করিবার জন্য ব্যগ্র হইয়া পড়িল প্রত্যেকেরই মনে মনে বিশ্বাস—একবার গৃহস্বামী তাহাকে চক্ষুষ দেখিয় তাহার গুণ শুনিলে আর চাকুরি না দিয়া থাকিতে পারিবেন না! অপুও ভাবিল সে উপরে যাইতে পারিলে একবার wষ্টা করিয়া দেথিত —তবে সে নিজের দুরবস্থার কথা কাহারও কাছে বলিতে পরিবে না । তাহার লজ্জা করে, দৈক্ষের কাছুনি গাহিয়া পরের সহানুভূতি আকর্ষণ করিবার চেষ্টা—অসম্ভব। লোকে কি করিয়া যে করে | প্রথম প্রথম সে কলিকাতায় আলিয়া ভাবিয়ছিল, কত বড়লোকের বাড়ি আছে কলিকাতার, চাহিলে একজন দরিদ্র ছাত্রের উপায় করিয়া দিতে কেহ কুষ্ঠিত হইবে না। কত পয়সা তো তাহদের কত দিকে যায় ? কিন্তু তখন সে নিজেকে ভুল বুঝিয়াছিল, চাহিবার প্রবৃত্তি, পরের চোখে নিজেকে হীন প্রতিপন্ন করিবার প্রবৃত্তি, এ-সব তাহার মধ্যে নাই। তাহার আছে—সে যাহা নয় তাহা হইতেও নিজেকে বড় বলিয়া জাহির করিবার, বাহাদুরী করিবার, মিথ্যা গর্ব করিয়া বেড়াইবার একটা কু-অভ্যাস। তাহার মারের নিবুদ্ধিতা এইদিক দিয়া ছেলেতে বর্তইয়াছে, একেবারে হুবহু— অবিকল। এই কলিকাতা শহরে মহা কষ্ট পাইলেও সে নিতান্ত অন্তরঙ্গ এক-আধজন ছাড়া কখনও কাহাকে—তাও নিজের মুখে কখনও কিছু বলে না। পাছে ভাবে গরীব ! ইতস্তত: করিয়া সেও অপরের দেখাদেখি কাঠের সিড়ি বাহিয়া উপরে উঠিতে গেল। নিচের উঠান হইতে চাকর ই ই করিয়া উঠিল—আরে কাহে আপলোক উপরমে যাতে ইে বাত, নেহি মানতে হে, এ বড় মুশকিল—। অপু সে কথা গ্রাহ না করিয়া উপরে উঠিয়া গেল। প্রৌঢ় বয়সের একটি ভদ্রলোক ঘরের মধ্যে বসিয়া, হোমিওপ্যাথি-পড়া ছোকরাটির সঙ্গে কি তর্ক চলিতেছে বাহির হইতে বুঝা গেল—ছোকরাটি কি বলিতেছে, ভদ্রলোকটি কি বুৰাইতেছেন। সে ছোকরা একেবারে নাছোড়বাঙ্গ, টিউশনি তাহার চাই-ই। ভদ্রলোকটি বলিতেছেন, ‘ম্যাটিকুলেশন-ফেল টিউটার দিয়া তিনি কি করিবেন ? ক্রমে সকলে একে একে বাহিরে আসিয়া চলিয়া গেল। অপু ঘরের মধ্যে ঢুকিয়া সসঙ্কোচে বলিল,—আপনাদের কি একজন পণ্ডাবার লোক দরকার—আজ সকালের কাগজে বেরিয়েছে— যেন সে এত লোকের ভিড়, উপরে উঠার নিষেধাজ্ঞা, কাগজে নামধাম লিথিয় রাখিবার উপদেশ কিছুই জানে না! আসলে সে ইচ্ছা করিয়া এরূপ ভালমাস্থ্য সাজে নাই—অপরিচিত