পাতা:বরেন্দ্র রন্ধন.djvu/১৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১৪
বরেন্দ্র বন্ধন।

১৩৬। লাবরা (লাফরা) বা সাদা তরকারী

 লাবরা বরেন্দ্রের (এবং পূর্ব্ব বঙ্গেরও বটে) একটি বিখ্যাত ব্যঞ্জন। লুচীর সহিত সাধারণতঃ ইহা খাওয়া হয়। বিবাহাদি ব্যাপারে ফলাহারে গৃহস্থ বাটীতে ইহা ভূরী পরিমাণে রাঁধা হইয়া থাকে। তখন এক সঙ্গে পরিমাণে অনেক রাঁধা হয় বলিয়া বস্তুতঃ ইহার স্বাদও উত্তম হইয়া থাকে। শ্রীচৈতন্যচরিতামৃতে এবং শ্রীচৈতন্যভাগবতে লিখিত আছে স্বয়ং মহাপ্রভু শ্রীশ্রীচৈতন্যদেব লাবরা বা লাফরা ব্যঞ্জনের পক্ষপাতী ছিলেন।[১]

 লাল আলু, গোল আলু, আনাজিকলা, খামা (শোলা) কচু, কুমড়া, শশা, কাঁটালবীচি, গাভথোড়, শিম, বেগুন, মূলা, বিলাতী কুমড়া, পটোল, ঝিঙ্গা প্রভৃতি আনাজ ইহাতে ব্যবহৃত হইয়া থাকে। কোবি প্রভৃতি হালি আনাজ ইহাতে সাধারণতঃ দেওয়া যায় না। এবং নইনীতালী আলু অপেক্ষা বরেন্দ্রের (নওগেঁয়ে) ছোট ছোট লাল্‌চে আলুতেই ইহার স্বাদ উত্তম হয়। করিলা প্রভৃতি তিক্ত স্বাদযুক্ত অনাজাদি ইহাতে কদাপি দিবে না। অথবা বিলাতী (মিঠা) কুমড়া লাবরায় অবশ্য দেয়; নচেৎ লাবরা শেষ পর্যন্ত বেশ লপেট গোছের হইবে না সুতরাং ব্যঞ্জনও মজিবে না। সম্ভবতঃ বেগুন বিশেষতঃ ‘লাফা’ বেগুন (এবং তদভাবে বিলাতী কুমড়া) এই ব্যজনের অত্যাবশ্যকীয় আনাজ বলিয়া ইহার নাম ‘লাফরা’ বা ‘লাবরা’ ব্যঞ্জন হইয়াছে। লাউর সহিত ইহার কোন সম্পর্ক থাকা দেখা যায় না।

 লৌহার কড়াই অপেক্ষা পিত্তলী কড়াইয়ে রাঁধিলে ইহার রঙ্গ বেশ পরিষ্কার হয়।


  1. “সার্ব্বভৌম পরিবেশন করেন অপেনে।
    প্রভু কহে মোরে দেহ লাফরা বাঞ্জনে।”

    চৈতন্য চরিতামৃত। মধ্য।৬।৩৫
    এবং—“লাফরা খায়েন প্রভু ভক্তগণ হাসে।”
    চৈতন্যভাগবত—‘বাঙ্গালা ভাষার অভিধানে’ উদ্ধৃত