পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অপরাজিত bశిd লীলা বৈঠকখানায় ব্যাপারটা না জানিতে পারে .. একটি ছোট আট-নয় বৎসরের ছেলেকে দেখাইয়া বলিল—একে চেনেন অপূর্ববাবু? এ সেই খোকামণি, আমার ছোট ভাই, এর অন্নপ্রাশনেই আপনাকে একবার আসতে বলেছিলুম, মনে নেই ? লীলার কয়েকটি সহপাঠিনী সেখানে উপস্থিত, সে সকলকে বলিল—তোমরা জান না, অপূর্ববাবুর গলা খুব ভাল, তবে গান গাইবেন কিনা জানি নে, মানে বেজায় লাজুক, আমি ছেলেবেলা থেকে দেখে আসছি, একটা অনুরোধ রাখবেন অপূর্ববাবু ? অপু অনেকের অনুরোধ-উপরোধে অবশেষে বলিল-আমি বাজাতে জানি নে—কেউ যদি বরং বাজান !— খাওয়াটা ভালই হইল! তবুও রাত্রে বাসায় ফিরিতে ফিরিতে তাহার মনে হইতেছিল— আর কখনও এখানে সে আসিবে না। বড়লোকের সঙ্গে তাহার কিসের খাতির-দরকার কি আসিবার ? একটা দারুণ অতৃপ্তি । যেদিন অপুর পরীক্ষা আরম্ভ হইবে তাহার দিন-পাঁচেক আগে অপু পত্রে জানিল মায়ের অমুখ, হস্তাক্ষর তেলি-বাড়ির বড় বৌয়ের। সন্ধ্যার সময় অপু বাড়ি পৌছিল । সর্বজয় কঁথি গায়ে দিয়া শুইয়া আছে, দুর্বল হইরা পড়িয়াছে দেখিয়া মনে হয়। অপুকে দেখিয়া তাড়াতাড়ি বিছানার উপর উঠিয়া বসিল। অনেক দিন হইতেই অমুখে ভূগিতেছে, পরীক্ষার পড়ার ব্যাঘাত হওয়ার ভয়ে খবর দেয় নাই, সেদিন তেলি-বোঁ জোর করিয়া নিজে পত্ৰ দিয়াছে। এমন যে কিছু শয্যাগত অবস্থা তাঁহা নয়, খায়-দায়, কাজকর্ম করে। আবার অমুখও হয় । সন্ধ্যা হইলেই শষ্য আশ্রয় করে, আবার সকালে উঠিয়া গৃহকর্ম শুরু করে। চিরদিনের গৃহিনীপনা এ অমুস্থ শরীরেও তাহাকে ত্যাগ করে নাই । অপু বলিল—উঠে না বিছানা থেকে মা—শুয়ে থাকো—দেখি গা ! —তুই আয় বোস্—ও কিছু নী—একটু জর হয়, থাই-দাই—ও এমন সময়ে হয়েই থাকে। বোশেখ মাসের দিকে সেরে যাবে—তুই যে মেয়েকে পড়াস, সে ভাল আছে তো ? সর্বজয়ার রোগশীর্ণ মুখের হাসিতে অপুর চোখে জল আসিল । সে পুটুলি খুলিয়া গোটাকতক কমললেবু, বেদান, আপেল বাহির করিয়া দেখাইল । জিনিসপত্র সস্তায় কিনিতে পারিলে সর্বজয়া ভারি খুশী হয়। অপু জানে মাকে আমোদ দিবার এটা একটা প্রকৃষ্ট প্রস্থা। কমলালেবুগুলা দেখাইয়া বলে—কত সন্তায় কলকাতায় জিনিসপত্র পাওয়া যায় স্থাখেলেবুগুলো দশপয়সা— প্রকৃতপক্ষে লেবু-ক'টির দাম ছ' আন । সর্বজয় আগ্রহের সহিত বলিল—দেখি । ওম, এখানে যে ওগুলোর গ্রামবারে আনার কম নয়—এখানে সব ডাকাত। 渔