পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

53Ն বিভূতি-রচনাবলী ধীরে ধীরে অসাড় হইয়া আসিতেছে ভয়ে--পায়ের দিক হইতে ভয়ট মুড়মুড়ি কাটিয়া উপরের দিকে উঠিতেছে, যতটা উঠিতেছে, ততটা অসাড় করিয়া দিতেছে...না—পায়ের দিক হইতে না—হাতে আঙুলের দিক হইতে কিন্তু তাহার সন্দেহ হইতেছে কেন ? ইহুরের শত্র নয় কেন ? কিসের শব্দ ? কখনও তো এমন সন্দেহ হয় না ?.*হঠাৎ সর্বজয়ার মনে হইল,না— পায়ের ও হাতের দিক হইতে সুড়সুড়ি কাটিয়া যাহা উপরের দিকে উঠিতেছে তাহা ভয় নয়— তাহ মৃত্যু। মৃত্যু ? ভীষণ ভয়ে সর্বজয়া ধড়মড় করিয়া আবার বিছানা হইতে উঠিতে গেল. চীৎকার করিতে গেল..খুব...খুব চীৎকার, আকাশফাট—অনেকক্ষণ চীৎকার করিয়াছে, আর সে চেঁচাইতে পারে না.গলা ভাঙিয়া আসিয়াছে -কেউ আসিল না তো ?...কিন্তু সে তো বিছানা হইতে বিছানা হইতে উঠিল কখন ?...সে তো উঠে নাই—ভয়ট মুড়সুড়ি কাটিয়া সারা দেহ ছাইয়া ফেলিয়াছে, যেন খুব বড় একটা কালো মাকড়সা শুড়ের বিষে দেহ অবশ ...অসাড়...হাতও নাড়ানো যায় না-পা-ও না সে চীৎকার করে নাই . ভুল।... সুন্দর জ্যোৎস্ব উঠিয়াছে “একজনের কথাই মনে হয় অপু...আপু”অপুকে ফেলিয়া সে থাকিতে পারিতেছে না-অসম্ভব ।...বিস্ময়ের সহিত দেখিল—সে নিজে অনেকক্ষণ কাদিতেছে! —এতক্ষণ তো টের পায় নাই ! ..আশ্চর্য ।---চোখের জলে বালিশ ভিজিয়া গিয়াছে যে ! -- জ্যোৎস্না অপূর্ব, ভয় হয় না...কেমন একটা আনন্দ...আকাশটা, পুরাতন আকাশটা যেন স্নেহে প্রেমে জ্যোৎস্না হইয় গলিয়া ঝরিয়া বিন্দুতে বিন্দুতে নিজেকে নিঃশেষ করিয়া দিতেছে ...টুপ-টুপ-টুপ-টাপ.। আবার কান্না পায়.জ্যোৎস্নার আলোয় জানালার গরাদে ধরিয়া হাসিমুখে ও কে দাড়াইয়া আছে ?...সৰ্বজয়ার দৃষ্টি পাশের জানালার দিকে নিবদ্ধ হইল বিস্ময়ে, আনন্মে রোগশীর্ণ মুখখানা মুহূর্তে উজ্জল হইয়া উঠিল.অপু দাড়াইয়া আছে।.এ অপু নয়-“সেই ছেলেবেলাকার ছোট অপু এতটুকু অপু-নিশ্চিনিপুরের বাশবনের ভিটেতে এমন কত চৈত্র-জ্যোৎস্না-রাতে ভাঙা জানালার ফাক দিয়া জ্যোৎস্নার আলো আসিয়া পড়িতে যাহার দন্তহীন ফুলের কুঁড়ির মত কচি মুখে...সেই অপু ওর ছেলেমানুষ খঞ্জন পাখির মত ডাগর ডাগর চোখের নীল চাহনি...চুল কোকৃড়া কোকৃড়া মুখচোরা, ভালমানুষ লাজুক বোকা, জগতের ঘোরপ্যাচ কিছুই একেবারে বোঝে না কোথায় যেন সে যায়.নীল আকাশ বাহিয়া বহু দূরে “বহু দূরের দিকে, মুনীল মেঘপদবীর অনেক উপরে. যায়.যায়.যায়.যায়-‘মেঘের র্যণকে যাইতে যাইতে মিলাইয়া যায় . বুঝি মৃত্যু আসিয়াছে।” কিন্তু তার ছেলের বেশে, তাকে আদর করিয়া আগু বাড়াইয়া লইতে. এতই সুন্দর. কি হাসি! কি মিষ্টি হালি ওর মুখের !... পরদিন সকালে তেলি-বাড়ির বড়-বোঁ আসিল । দরজায় রাত্রে খিল দেওয়া হয় নাই, খোলাই আছে, বড়-বে আপন মনে বলিল—রাত্রে দেখছি মা-ঠাকুরুণের অমুখ খুব বেড়েছে, খিলটাও দিতে পারেন নি।