পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অপরাজিত ১৩৫ ছাড়া অপুর অভিজ্ঞতা জন্মিয়াছে যে, কলিকাঙায় ছেলে-পড়ানো বাবার মুখে শৈশবে শেখা উদ্ভট শ্লোকের পদ্মপত্রস্থিত জলবিদুর মত চপল, আজ যদি যায় কাল দাড়াইবার স্থান নাই! কয়েকদিন ধরিয়া খবরের কাগজ দেখিয়া দেখিয়া পাইওনিয়ার ড্রাগ স্টোসে একটা কাজ খালি দেখা গেল দিন কতক পরে। আমহাস্ট স্ট্রীটের মোড়ে বড় দোকান, পিছনে কারখানা, তখনও ভিড় জমিতে শুরু হয় নাই, অপু চুকিয়াই এক স্থূলকায় আধাবয়সী ভদ্রলোকের একেবারে সামনে পড়িল । ভদ্রলোক বলিলেন, কাকে চান ? অপু লাজুক মুখে বলিল—আজে, চাকরি খালির বিজ্ঞাপন দেথে—তাই— —ও! আপনি ম্যাটিক পাশ ? —আমি এবার আই-এ— ভদ্রলোক পুনরায় তাকিয়ায় ভর দিয়া হাল ছাড়িয়া দিবার স্বরে বললেন—ও আই-এ পাশ নিয়ে আমরা কি করব, আমাদের লেবেলিং ও মাল বট লিং করার জন্তে লোক চাই। খাটুনিও খুব, সকাল সাতটা থেকে সাড়ে দশটা, মধ্যে দেড় ঘণ্টা খাবার ছুটি, আবার বারোটা থেকে পাচটা, কাজের চাপ পড়লে রাত আটটাও বাজবে— —মাইনে কত ? —আপাতত পনেরো, ওভারটাইম খাটলে দু’আন জলখাবার—সে-সব আপনাদের কলেজের ছোকরার কাজ নয় মশায়—আমরা এমনি মোটামুটি লোক চাই ! ইহার দিনকতক পরে আর একটা চাকুরি খালির বিজ্ঞাপন দেখিয়া গেল ক্লাইভ স্ট্রীটে। দেখিল, সেটা একটা লোহা-লক্কড়ের দোকান, বাঙালী ফার্ম। একজন ত্রিশ-বত্রিশ বছরের অত্যন্ত চুল-ফাপানে, টেরি-কাটা লোক ইঞ্জি-করা কামিজ পরিয়া বসিয়া আছে, মুখের নিচের দিকের গড়নে একটা কর্কশ ও স্থূলভাব, এমন ধরণের চেহারা ও চোখের ভাবকে সে মাতাল ও কুচরিত্র লোকের সঙ্গে মনে মনে জড়িত করিয়া থাকে। লোকটি অত্যন্ত অবজ্ঞার স্বরে বলিল—কি, কি এখানে ? অপুর নিজেকেই অত্যন্ত ছোট বোধ হইল নিজের কাছে। সে সঙ্কুচিত মুরে বলিল— এখানে একটা চাকরি খালি দেখে আসছি ; লোকটার চেহারা বড়লোকের বাড়ির উচ্ছ জ্বল, অসচ্চরিত্র, বড় ছেলের মত। পূর্বে এ ধরণের চরিত্রের সহিত তাহার পরিচয় হইয়াছে, লীলাদের বাড়ি বধমানে থাকিতে। এই টাইপটা সে চেনে। লোকটা কর্কশ মুরে বলিল—কি কর তুমি ? —আমি আই-এ পাশ–করি নে কিছু—আপনাদের এখানে— —টাইপ রাইটিং জান ? না 7—যাও যাও, এখানে হবে না-ও কলেজ-টলেজ এখানে চলবে না—ষাও— সেদিনকার ব্যাপারটা বাসায় আলিয়া গল্প করাতে ক্যাম্বেল স্কুলের ছাত্রটির এক কাক