পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

〉○b" বিভূতি-রচনাবলী বাপিত হইয়াছে—তাহীদের সুখ-দুঃখ আশানিরাশার গল্প, তাহীদের বুকের স্পন্দনের ইতিহাস সে জানিতে চায় । কেবল মাঝে মাঝে এখানে ওখানে ঐতিহাসিকদের লেখা পাতায় সম্মিলিত সৈন্তব্যুহের এই আড়ালটা সরিয়া যায়, সারি বাধা বর্শার অরণ্যের ফঁাকে দূর অতীতের এক ক্ষুদ্র গৃহস্থের ছোট বাড়ি নজরে আসে। অজ্ঞাতনামা কোন লেখকের জীবন-কথা, কি কালের স্রোতে কুলে-লাগা এক টুকরা পত্র, প্রাচীন মিশরের কোন কৃষক পুত্রকে শস্ত কাটিবার কি আয়োজন করিতে লিখিয়াছিল,—বহু হাজার বছর পর তাদের টুকরা ভূগর্ভে প্রোথিত মুগ্ময়পাত্রের মত দিনের আলোয় বাহির হইয়া আসে। কিন্তু আরও ঘনিষ্ঠ ধরণের, আরও তুচ্ছ জিনিসের ইতিহাস চায় সে। মানুষ, মানুষের বুকের কথা জানিতে চায়। আজ যা তুচ্ছ, হাজার বছর পরে তা মহাসম্পদ। ভবিষ্যতের সত্যকার ইতিহাস হইবে এই কাহিনী, মামুষের মনের ইতিহাস, তার প্রাণের ইতিহাস ! আর একটা দিক তাহার চোখে পড়ে। একটা জিনিস বেশ স্পষ্ট হইয়া উঠে তাহার কাছে—মহাকালের এই মিছিল। বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যের ইতিহাস গিবন ভ্রমশূন্ত লিথিয়াছেন, কি অন্ত কেহ ভ্রমশূন্ত লিথিয়াছেন, এ বিষয়ে তাহার তত কৌতুহল নাই,সে শুধু কৌতুহলাক্রান্ত মহাকালের এই বিরাট মিছিলে। হাজার যুগ আগেকার কত রাজা, রাণী, সম্রাট, মন্ত্রী, খোজা, সেনাপতি, বালক, যুব, কত অশ্রনয়ন তরুণী, কত অর্থলিপ্ত, রাজপুরুষ—যাহার অর্থের জন্য অন্তরঙ্গ বন্ধুর গুপ্ত কথা প্রকাশ করিয়া তাহাকে ঘাতকের কুঠারের মুখে দ্বিধা বোধ করে নাই—অনন্ত কালসমূত্রে ইহাদের ভাসিয়া যাওয়ার, বুদ্ধদের মত মিলাইয়া যাওয়ার দিকটা । কোথায় তাদের বৃথা শ্রমের পুরস্কার, তাদের অর্থলিপার সার্থকতা ? এদিকে ছুটাছুটিই সার হইতেছে—কাজে কিছুই হয় না। সে তো চায়-না বড়মানুষ হইতে—খাওয়া-পরা চলিয়া গেলেই সে খুশী—পড়াশুনা করার সে সময় পায় ও নিশ্চিন্ত হইতে পারে। কিন্তু তাও তো হয় না, টুইশানি না থাকিলে একবেলা আহারও জুটিত না যে। তা ছাড়া এ সব জায়গার আবহাওয়াই তাহার ভাল লাগে না আদৌ। চারিধারে অত্যন্ত হুঁশিয়ারী, দর-কষাকষি,..শুধু টাকা.টাকা - টাকা সংক্রান্ত কথাবার্তা—লোকজনের মূখে ও চোখের ভাবে ইতর ও অশোভন লোভ যেন উগ্রভাবে ফুটিয়া বাহির হইতেছে—এদের পাক বৈষয়িক কথাবার্তায় ও চালচলনে অপু তয় খাইয়া গেল ! লাইব্রেরীর পরিচিত জগতে আসিয়া সে স্থাপ ছাড়িয়া বঁাচে প্রতিদিন । একদিন মুসলমান দালালটি বাজারে তাহার কাছে দুইটি টাকা ধার চাহিল। বড় কষ্ট বাইতেছে, পরের সপ্তাহেই দিয়া দিবে এখন। অপু ভাবিল—হয়ত বাড়িতে ছেলেমেয়ে আছে, রোজগার মাই এক পয়সা। অর্থাভাবের কষ্ট যে কি সে তাহা ভাল করিয়াই বুঝিয়াছে এই দুই বৎসরে—নিজের বিশেষ স্বাচ্ছল্য না থাকিলেও একটি টাকা বাসা হইতে আনিয়া পরদিন বাজারে লোকটাকে দিল । *