পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ꮌ88 বিভূতি-রচনাবলী পথে অপু বলিল—কি হবে বাকী রাতটুকু ঘুমিয়ে ; আজ বসে গল্প ক’রে রাত কাটাই। কর্ণওয়ালিশ স্কোয়ারের কাছে আসিয়া অপু বন্ধুর হাত ধরিয়া রেলিং টপকাইয়া স্কোয়ারের ভিতর ঢুকিয়া পড়িল—বলিল—মার আয়, এই বেঞ্চিটাতে বলি, আমি নিমৰ্চাদের পার্ট প্লে করব, দেখবি— প্রণব হাসিয়া বলিল—তোর মাথা খারাপ আছে—এত রাতে বেশী চেঁচাস নি—পুলিশ এসে তাড়িয়ে দেবে—কিন্তু খানিকটা পর প্রণবও মাতিয়া উঠিল । দু’জনে হাসিয়া আবোলতাবোল বকিয়া আরও ঘন্টাখানেক কাটাইল। অপু একটা বেঞ্চির উপরে গড়াগড়ি দিতেছিল ও মুখে নিমৰ্চাদের অনুকরণে ইংরাজি কি কবিতা আবৃত্তি করিতেছিল—প্ৰণবের ভয়হচক স্বরে উঠিয়া বসিয়া চাহিয়া দেখিল ফুটপাথের উপর একজন পাহারাওয়ালা। অমনি সে বেঞ্চের êo figfood firsofa of oil for $fo—Hail, Holy Light I Heaven's First born —পরে দুইজনেই ডাফ স্ট্রীটের দিকের রেলিং টপকাইয়া সোজা দৌড় ছিল। রাত্রি আর বেশী নাই। আমহাস্ট স্ট্রীটের একটা বড় লাল বাড়ির পৈঠায় অপু গিয়া বসিয়া পড়িয়া বলিল—কোথায় আর যাবে।—আয় বোস এখানে— প্রণব বলিল—একটা গান ধর তবে— অপু বলিল-বাড়ির লোকে দোর খুলে বেরিয়ে আসবে—কোন রকমে পুলিশের হাত থেকে বেঁচে গিয়েছি— —কেমন পাহারাওয়ালাটাকে চেচিয়ে বললুম—Hail, Holy Light –হি-হ–টরও পায় নি ? কোথা দিয়ে পালালুম—নিমৰ্চাদের মত হয় নি –হি-হি— প্রণব বলিল—তোর মাথায় ছিট, আছে—যা: সারা রাতটা ঘুম হ’ল না তোর পাল্লায় পড়ে —গা একটা গানই গা—আস্তে আস্তে ধর–আবার হাসে, যা:– ইহারই দিন-পনেরো পরে একদিন প্রণব আসিয়া বলিল—তোকে নিয়ে যাব বলে এলাম —আমার মামাতো বোনের বিয়ে হবে সোমবারে, শুক্রবার রাত্রে আমরা যাব, খুলনা থেকে স্টীমারে যেতে হয়, অনেকদিন কোথাও যাস নি, চল আমার সঙ্গে, দিন-চার-পাঁচের ছুটি পাবি নে ? ছুটি মিলিল। ট্রেনে উঠিবার সময় তাহার ভারি আনন্দ । অনেকদিন কলিকতা ছাড়ির যায় নাই, অনেকদিন রেলেও চড়ে নাই। সকালবেলা স্টিমারে উঠবার সময় ভৈরবের ওপার হইতে তরুণ স্বর্য ওঠার দৃপ্তটা তাহাকে মুগ্ধ করিল। নদী খুব বড় ও চওড়া, স্টীমার প্রণবের মামার বাড়ির ঘাটে ধরে না, পাশের গ্রামে নামিয়া নৌকায় যাইতে হয়। অপু এ অঞ্চলে কখনও আসে নাই, সম্পূর্ণ অপরিচিত দেশ, নদীর ধীরে সুপারির সারি, বাশ, বেত-বন, অসংখ্য নারিকেল গাছ। টিনের চালাওয়ালা গোলাগঞ্জ। অদ্ভুত ধরণের নামস্বরূপকাটি, যশাইকাটি। দক্ষিণ-পূর্ব কোণ ও খাড় পশ্চিম, দু'দিক হইতে প্রকাণ্ড দুটি নদী মাসিয়া পরস্পরকে চুইয়। অর্ধচন্দ্রাকারে বাকিয়া গিয়াছে, সেখানটাতে জলের রং ঈষৎ সবুজ এবং এই সঙ্গমস্থানেরই ও-পারে আধ মাইলের মধ্যে প্রণবের মামার বাড়ির গ্রাম গঙ্গাননাকাটি।