পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

"অপরাজিত »8ማ এ সব কথা প্ৰণবের মুখেই ক্রমে ক্রমে শোনা গেল । স্নানের সময়ে সে নদীতে স্নান করিতে চাহিলে সকলেই বারণ করিল—এখানকার নদীতে এ সময়ে কুমীরের উৎপাত খুব বেশী, পুকুরে স্বান করাই রাপদ । বৈকালে একজন বুদ্ধ ভদ্রলোক কাছারী-বাড়ির বারানাতে বসিয়া গল্প করিতেছিলেন, দিন-পনেরো পূর্বে নিকটস্থ কোন গ্রামের জনৈক তাতির ছেলে হঠাৎ নিরুদ্ধেশ হইয়া যায়, সম্প্রতি তাহাকে রায়মঙ্গলের এক নির্জন চরে অজ্ঞান অবস্থায় পাওয়া গিয়াছে । ছেলেটি বলে, তাহাকে নাকি পরীতে ভুলইয়া লইয়া গিয়াছিল, প্রমাণস্বরূপ সে আঁচলের খুঁট খুলিয়া কাচা লবঙ্গ, এলাচ ও জায়ফল বাহির করিয়া দেখাইয়াছে, এ-অঞ্চলের ত্রিসীমানায় এ সকলের গাছ নাই—পরী কোথা হইতে আনিয়া উপহার দিয়াছে। প্ৰণবের মামীম দুপুরে কাছে বসিয়া দুজনকে খাওয়াইলেন, অনেকদিন অপুর অদৃষ্টে এত যত্ন আদর বা এত ভাল খাওয়া-দাওয়া জোটে নাই। চিনি, ক্ষীর, মশলা, কপূর, ঘৃত, জীবনে কখনও তাঁহাদের দরিদ্র গৃহস্থালীতে এ সকলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ পরিচয় ঘটে নাই। মায়ের সংসারে চালের গুড়া, গুড় ও সরিষার তৈলের কারবার ছিল বেশী । একাদশ পরিচ্ছেদ পরদিন বিবাহ। সকাল হইতে নানা কাজে সে বাড়ির ছেলের মত থাটিতে লাগিল। নাটমন্দিরে বরাসন সাজানোর ভার পড়িল তাহার উপর। প্রাচীন আমলের বড় জাজিম ও শতরঞ্চির উপর সাদা চাদর পাতিয়া ফরাস বিছানে, কাচের সেজ ও বাতির ডুম টাঙ্গানে, দেবদারু পাতার ফটক বাধা, কাগজ কাটিয়া দম্পতির উদেখে আশীষবাণী রচনা, সকাল আটটা হইতে বেলা তিনটা পর্যন্ত এসব কাজে কাটিল। সন্ধ্যার সময় বর আসিবে। বরের গ্রাম এই নদীরই ধারে, তবে দশ বারো ক্রোশ দূরে, নদীপথেই আসিতে হইবে। বরের পিত্তা ও-অঞ্চলের নাকি বড় গাতিদার, তাহা ছাড়া বিস্তৃত মহাজনী কারবারও আছে। বরের নৌকা আসিতে একটু বিলম্ব হইতে পারে, প্রথম লগ্নে বিবাহ যদি না হয় রাত্রি দশটার লগ্ন বাদ যাইবে না। ব্যাপার বুঝির অপু বলিল—রাত তো আজ জাগতেই হবে দেখছি, আমি এখন একটু ঘুমিয়ে নি ভাই, বর এলে আমাকে ডেকে তুলে এখন। প্রণব তাহাকে তেতলার চিলে-কোঠার ঘরে লইয়া গিয়া বলিল—এখানে হৈ-চৈ কম, এখানে ঘুম হবে এখন, আমি ঘণ্টা দুই পরে ডাকবো। বরটা ছোট, কিন্তু খুব হাওয়া, দিনের শাস্তিতে সে শুইতে না শুইতে ঘুমাইয়া পড়িল।