পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

> (t९ বিভূতি-রচনাবলী পরদিন সকালে পূর্বতন বরপক্ষের সহিত তুমুল কাও বাধিল । উভয় পক্ষে বিস্তর তর্ক, ঝগড়, শাপাশাপি, মামলার ভয় প্রদর্শনের পর কেনারাম মুখুয্যে দলবলসহ নৌকা করিয়া স্বগ্রামের দিকে যাত্রা করিলেন। প্রণব বড়মামাকে বলিল—ওসব বড় লোকের মুধু জড়ভরত ছেলের চেয়ে আমি যে পূর্বকে কত বড় মনে করি!.. একা কলকাতা শহরে সহায়হীন অবস্থায় ওকে যা দুঃখের সঙ্গে লড়াই করতে দেখেছি আজ তিন বছর ধরে, ওকে একটা সত্যিকারের মানুষ বলে ভাবি ৷ অপুর ঘর-বাড়ি নাই, ফুলশয্যা এখানেই হইল। রাত্রে অপু ঘরে ঢুকিয়া দেখিল, ঘরের চারিধার ফুল ও ফুলের মালায় সাজানো, পালঙ্কের উপর বিছানায় মেয়ের একরাশ বৈশাখী চাপাফুল ছড়াইয়। রাখিয়াছে, ঘরের বাতাসে পুপদারের মৃদ্ধ সৌরভ। অপু সাগ্রহে নববধূর আগমন প্রতীক্ষা করিতেছিল । বাসরের রাত্রের পর আর মেয়েটির সহিত দেখা হয় নাই বা এ পর্যন্ত তাহার সঙ্গে কথাবার্তা হয় নাই আদৌ–আচ্ছা ব্যাপারটা কি রকম ঘটিবে ? অপুর বুক কৌতুহলে ও আগ্রহে চিপ, চিপ, করিতেছিল। থানিক রাত্রে নববধূ ঘরে ঢুকিল । সঙ্গে সঙ্গে অপুর মনে আর একদফা একটা অবাস্তবতার ভাব জাগিয়া উঠিল। এ মেয়েটি তাঁহারই স্ত্রী ? - স্ত্রী বলিতে যাহা বোঝায় অপুর ধারণা ছিল তা যেন এ নয়, কিংবা হয় ত স্ত্রী বলিতে ইহাই বোঝায়, তাহার ধারণা ভুল ছিল। মেয়েটি দোরের কাছে ন যযৌ ন তস্থে অবস্থায় দাড়াইয়া ঘামিতেছিল--অপু অতিকষ্টে সঙ্কোচ কাটাইয়া মৃদুস্বরে বলিল—আপনি—তু—তুমি দাড়িয়ে কেন ? এখানে এসে বস– বাহিরে বহু বালিকাকন্ঠের একটা সম্মিলিত কলহাস্যধ্বনি উঠিল। মেয়েটিও মৃদু হাসিয়া পালঙ্কের একধারে বসিল—লজ্জায় অপুর নিকট হইতে দূরে বসিল। এই সময় প্রণবের ছোট মামীম আসিয়া বালিকার দলকে বকিয়া-ঝকিয়া নিচে নামাইয়া লইয়া যাইতে অপু খানিকট স্বস্তি বোধ করিল। মেয়েটির দিকে চাহিয়া বলিল—তোমার নাম কি ? মেয়েটি মৃদুস্বরে নতমুখে বলিল—শ্ৰীমতী অপর্ণ দেবী—সঙ্গে সঙ্গে সে অল্প একটু হাসিল । যেমন সুন্দর মুখ তেমনি মুন্দর মুখের হাসিটা—কি রং কি গ্রীবার ভঙ্গি। চিবুকের গঠনটি কি অপরূপ—মুখের দিকে চাহিয়া উজ্জল বাতির আলোয় অপুর যেন কিসের নেশা লাগিয়া গেল । দু'জনেই খানিকক্ষণ চুপ। অণুর গলা শুকাইয়া আসিয়াছিল। কুঁজা হইতে জল ঢালিয়া এক গ্লাস জলই সে খাইয়া ফেলিল। কি কথা বলিবে সে খুঁজিয়া পাইতেছিল না, ভাবিয়া ভাবিয়া অবশেষে বলিল—আচ্ছ, আমার সঙ্গে বিয়ে হওয়াতে তোমার মনে খুব কষ্ট হয়েছে –ના ? - বধু মুছ হাসিল। —বুঝতে পেরেছি ভারী কষ্ট হয়েছে—তা আমার— —যান— এই প্রথম কথা, তাহাকে এই প্রথম সম্বোধন । অপুর সারাদেহে যেন বিদ্যুৎ খেলিয়া