পাতা:বরেন্দ্র রন্ধন.djvu/২০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৮৪
বরেন্দ্র রন্ধন

গেলে মাছ ভাঙ্গিয়া যায়, কিন্তু মাংস সেরূপে ভাঙ্গিয়া যাইবার কোন সম্ভাবনা নাই; পরন্তু মাংস পুর্ব্বে মাখিয়া ঢাকিয়া রাখিলে ঝাল-নুণ-তৈলাদি মাংসের ভিতরে প্রবেশ করিয়া তাহার স্বাদ বৃদ্ধি হয়। মাংসে বাটা ঝাল মাখিবার সময় তৎসহ আবশ্যক মত তৈল, (রশুন বাটা) এবং অম্ল যথা—দধি প্রভৃতি মিশাইয়া ঘণ্টা কয়েক ঢাকিয়া রাখিয়া রাঁধিলে উহার আস্বাদন আচারের ন্যায় মধুর হয়। বস্তুতঃ এই স্বভাবের অনুসরণেই মোগলাই ‘কোর্ম্মা’ পাক হইয়া থাকে।

১১৯। কেঠোর কালিয়া

 বরেন্দ্র-ভূমে ‘কেঠো’ খাওয়া খুব চলন। কেঠো বলিলে যে সে কচ্ছপকে বুঝাইবে না, নদীতে সাধারণতঃ সর্ব্বভুক থল্‌থলে-পার্শ্ব-চেড়ো (খোল) বিশিষ্ট অপেক্ষাকৃত বড় বড়, চ্যাপ্টা গোছের যে কচ্ছপ পাওয়া যায়, ইহা সে জাতীয় নহে, এই নদীর কচ্ছপ অতিশয় দুর্গন্ধ বিশিষ্ট ও অখাদ্য। এই জাতীয় অন্য এক প্রকারের অপেক্ষাকৃত ছোট কচ্ছপ আছে যাহাকে সাধারণতঃ ‘উগ্‌লা কেঠো’ বা ‘সিম কেঠো’ বলে, ইহা তাহাও নহে। সিম কেঠো খায় বটে, কিন্তু তাহার স্বাদও আঁষটে। আমি যে জাতীয় কেঠোর কথা বলিতেছি তাহা সাধারণতঃ কার্ত্তিক অগ্রহায়ণ মাসে বিলে, খালে পাওয়া যায়। ইহার চেড়োর সমস্তটাই খুব শক্ত এবং ‘কুরুম পিঠে’ (কূর্ম্ম পৃষ্ঠ) বলিলে যেরূপ আকার বুঝায় সেইরূপ আকার বিশিষ্ট। এই কেঠো কেবলমাত্র জলজ উদ্ভিদ্ খাইয়া জীবন ধারণ করে। ইহারা নদীর কচ্ছপের ন্যায় সর্ব্বভুক্ অথবা তাদৃশ হিংস্র স্বভাব সম্পন্ন নহে। ইহা আকারে তাদৃশ বৃহৎও হয় না,—মুঠম হাতের অধিক লম্বা কেঠো প্রায়ই দেখা যায় না। ইহার বুকের খোলাও কঠিন ও হরিদ্রা বর্ণ এবং তদুপরি কাল কাল দাগ বিশিষ্ট। আর এক প্রকার কেঠো আছে তাহা অতি