পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তৃণাঞ্চুর ጏጫ፭ চরছে, বাকের মোড়ে দূরে খাব রাপোভা গ্রামের বাশবন, সুবৃহৎ lyre পক্ষীর পুচ্ছদেশের মত নতুন বাশের আগা—একটু একটু রোদ মাখা। নদীজলের ঠাণ্ড ঠাণ্ড গন্ধ বেরুচ্চে, মাখার ওপরকার আকাশ ঘন নীল, কিন্তু পশ্চিম দিগন্তে গ্র শময় শিমুল, কদম গাছের মাথায় মাথার অপরূপ মেঘস্তুপ, মেঘের পর্বত—মেঘের গিরি "ত্মের ফাকটা দিয়ে অস্তম্বর্ষের ওপারের দেশের খানিকট যেন দেখা যায়। খানিকট গিয়ে একধারের পাড় খুব উচু, বস্তু নিমগাছের সারি, পাড়ের ধারে গাঙ, শালিকের গর্ত, নীল মাছরাঙা পাখী শেওলার ধারে ধীরে মাছ খুজতে খুজতে একবার ওঠে, একবার বসে–খেজুরগাছ, গাবভেরাগু, বৈঁচি, ফুলে ভর্তি সাই-বাবলা, আকন্দের ঝোপ, জলের ধারের নলবন, কাশ, ষাড়া, নোন, গুলঞ্চলতা-দোলানো শিমুল গাছ, শালিক পাখী, খেকশিয়ালী, বাশঝাড়, উইঢিবি, বনমূলোর ঝাড়, বকের দল, উচু ডালে চিলের বাসা,উলুঘাস, টোপাপানীর দাম । সামনেই কাচিকাটার খেয়াঘাট, দুখান ছোট চালাঘর, জনকতক লোক পারের অপেক্ষায় বসে—ডানধারের আকাশটায় অপূর্ব হীরাকসের রঙ ধরেচে–গাঢ়, নীল। আবার দুপাড় নির্জন, এক এক স্থানে নৌকা তীরের এত নিকট দিয়ে যাচ্ছে যে কেলের্কোড়া ফুলের গন্ধ পাওয়া যায়। বেলা আরও পড়ে এল, চারিদিকে শোভা অপরূপ, লিখে তা প্রকাশ করা যাবে না, ডাইনে ঘন সবুজ ঘাসের মাঠ, বামে আবার উচু পাড়, আবার বাবলা গাছ, শিমুলগাছ, ঘাড়া গাছ, পাখীর দল শেষ-বেলায় ঝোপে ঝোপে কলরব করচে—দূরে গ্রামের মাথায় মেঘন্তু পট পেছনে পড়েচে—এক এক স্থানে নদী-জল ঘোর কালো, নিথর কলার পাতার মত পড়ে আছে—দেখাচ্চে যেন গহন, গভীর, অতলস্পর্শ। বাকটা ঘুরেই অনেকখানি আকাশ এক সঙ্গে দেখা যাচ্চে, পশ্চিম আকাশের কোলে যেন আগুন লেগেচে—অনেকখানি দূর পর্যন্ত মেঘে আকাশে, গাছের মাথায় মাথায় যেন সে আগুনের আভা, খাব রাপোতার ঘাটের পাশে কোন দরিদ্র কৃষক-বন্ধুজলের ধারের কাঁচড়াদাম শাক ক্টোচড় ভরে তুলচে আর মাঝে মাঝে সলজ্জভাবে আমাদের নৌকার দিকে চাইচে । আরও খানিকদূর গেলাম, আবার সেই নির্জনত, কোথাও লোক নেই,জন নেই, ঘর-বাড়ি নেই, শুধু মাথার ওপর সন্ধ্যার ধূসর ছায়াছন্ন আকাশ আর নীচে সেই মাঠ ও গাছপালা দুধারে । বুড়ে ছকু মাঝি ছেলে সঙ্গে নিয়ে দুখান ডিঙি দোয়াড়ি বোঝাই দিয়ে চূর্ণ নদীতে মাছ ধরতে যাচ্চে, তিন দিনে সেখানে নাকি পৌঁছুবে বললে। একদিকে ঘন সবুজ কাচ ক্যাড়ের বন, নীচু পাড়, জলের খানিকটা পর্যন্ত দাম-ঘাসে বোঝাই,কলমী শাক অজস্ৰ, আর কলমীর দামে জলপিপি ও পানকৌড়ী বসে আছে। মাথার ওপরকার আকাশটা বেয়ে সবাইপুরের মাঠটার দিক থেকে খুব বড় এক বাঁক শামূকুট পাখী বাসার ফিরচে, বোধ হয় জটেমারির বিল থেকে ফিরলো, পাচপোতার বাওড়ে যাবে। সেইখানটাতে আবার মলে মাঝি কাস্তে হাতে ঘাস কাটতে নামলো—কি অপরূপ শোভা, সামনে খাব রাপোতার ঘাটটা— একটা শিমুল গাছের পিছনে আকাশে পাটকিলে রঙের মেঘদ্বীপ, চারিধারে এক অপূর্ব খামলত, কি শ্ৰী, কি শান্তি, কি স্নিগ্ধতা, কি অপূর্ব আনন্দেই মন ভরিয়ে তোলে—নলে কাস্তে