পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

o বিভূতি-রচনাবলীسb * হাতে ঘাস কাটচে-কাচ ক্যাড়ের মিষ্ট, সরস, জোলো গন্ধ বার হচ্চে, আমি শুধু হেলান দিয়ে বসে দূরের আকাশটা ও গাছপালার দিকে চেয়ে আছি। জীবনটাকে উপভোগ করতে জানতে হয়। মাত্র আট আনা খরচ হল—তাই কি ? তার বদলে আজ বৈকালে যে অপূর্ব সম্পদ পেলাম, তার দাম দেয় কে ? আমাদের গ্রামের কেউ আসতে পয়সা খরচ করে থামোক নৌকায় বেড়াতে ? কেউ গ্রহ করে এই অপরূপ বনশোভা, এই অস্তদিগন্তের ইন্দ্রজাল, এই পাখীর দল, এই মোহিনী সন্ধ্যা ?...কেউ না । এই যে সৌন্দর্যে দিশহারা হয়ে পড়চি, মুগ্ধ, বিস্মিত, রোমাঞ্চিত হয়ে উঠচি—এই সৌন্দর্যের মধ্যে ডুবে থেকেও এর কেউ চোখ খুলে চায় ? ..আমি এসব করি বলে হয়তো আমাকে পাগল ভাবে • • • যে জাতির মধ্যে সৌন্দৰ্য-বোধ দিন দিন এত কমে যাচ্চে, সে জাতির ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে খুব সন্দেহ হয়। শহর-বাজারের কথা বাদ দিলাম, এই সব পাড়াগায়ে যেখানে আসল জাতিটা বাস করে, সেখানকার এই কুত্র জীবনযাত্রার প্রণালী, দৃষ্টির এই সংকীর্ণতা, এই শিল্পবোধের অভাব মনকে বড় পীড়া দেয় । এবার জ্যোৎস্ন উঠলো—আজ শুক্লা একাদশী, নলবন বাতাসে দুলচে, জ্যোৎস্না পড়ে দুপাশের নদীজল চিক্-চিক্‌ করচে। ঘাসের অঁটি বেঁধে নিয়ে নলে মাঝি নৌকা ছেড়ে দিল । এত পার্থী, গাছপালা, নীল আকাশ, এই অপূর্ব সৌন্দর্য এ সব যেন আমারই জন্যে স্বঃ হয়েচে । এদেশেই তো এসব ছিল এতদিন, কেউ তো দেখে নি, কেউ তো ভোগ করে নি— কতকাল পরে আমি এদের বুঝলাম, এদের থেকে গভীর আনন্দ পেলাম, এদের রসধারা পান করে তৃপ্ত হলাম—এই জ্যোৎস্না, এই আকাশ, এই অপূর্ব ইছামতী নদী আমারই জন্ত তৈরি হয়েচে । অনেক দিন পরে আমাদের ঘাটে দুপুরে স্নান করতে গিয়েছিলুম। স্নান সেরে এই রৌদ্রদীপ্ত নদী, দূরের ঘুঘুডোকা বনানী, উষ্ণমণ্ডলের এই অপূর্ব বন-সম্পদ, স্বচ্ছ জলের মধ্যে সস্তরণশীল মৎস্যরাজি, নির্মেঘ নীল আকাশ—আমার শিরায় শিরায় কেমন একপ্রকার মাদকতার স্বষ্টি করল । একটি ছেলের ছবি মনে এল—সে এমনি Tropics-এর শুামল সৌন্দর্য, রৌদ্রকরোজ্জলা পৃথ্বী, নীল দিক্‌চক্রবালের উদার প্রখরতার মধ্যে এই জলধারা পান করে, দিনরাত গায়ক পার্থীদের কাকলী শুনে শৈশবে মানুষ হয়েছিল—গ্রামের কত দুঃখ-দারিদ্র্য, কত বেদনা, কত আনন্দ কত আশা, কত ব্যর্থতার মধ্যে দিয়ে। সে মুম্বষ হয়ে উঠে এদের গান গেয়ে গেল— এই গাছপালা, লতা, পাখী, ফুলঙ্কল, স্বর্য—এদের,—এরাই তাকে কবি করেছিল। বৈকালে হাট থেকে এসে বইখানা নিয়ে নিজের ভিটেতে গিয়ে খানিকট পড়ে এলুম— তারপর গেলুম জটেমারির প্লাটাতে। বিবৃঝিরে বাতাসে শরীর জুড়িয়ে গেল। তারপর এক বড় অদ্ভুত অভিজ্ঞতা হল, এমন এক অপূর্ব আননে মন ভরে উঠল, সারা গা এমন শিউরে