९९० বিভূতি-রচনাবলী লাগল। শাল জঙ্গল, পাহাড়, স্থানটাও অতি নির্জন। বাংলাদেশের কাছে যত আসি ততই সমএল প্রান্তর বেশী । খড়গপুরের ওদিকে কলাইকুণ্ডা জায়গাটি এ হিসাবে বেশ ভাল । বাংলাদেশে গাড়ি ঢুকল। তখন বেলা একেবারে চলে গেছে। এ আর এক রূপ, অতি কমণীয়, শাস্ত শুiমল । চোখ জুড়িয়ে যায়, মন শাস্ত হয় কিন্তু এর মধ্যে বিরাটত্ব নেই, majesty নেই—হৃদয় মন বিস্ফারিত হয় না, কল্পনা উদাম হয়ে উঠে অসীমতার দিকে ছুটে চলে না । এতে মনে তৃপ্তি আসে—ছোটখাটো ঘরোয়া সুখ দুঃখের কথা ভাবায়, নানা পুরনো স্মৃতি জাগিয়ে তোলে—মানুষ যা নিয়ে ঘরকল্প করতে চায় তার সব উপকরণ জোগায়। হাসি অশ্ৰ মথিানে লজ্জাবনত পল্লীবধুটি ধেন—তাঁর সবই মিষ্টি, কমনীয়। কিন্তু মানুষের মন এ ছাড়া আরও কিছু চায়, আরও উদাম, অশাস্ত, রুক্ষ, রুদ্র ভাব চায়। বাংলাদেশে তা যেন ঠিক মেলে না । হিমালয়ের কথা বাদ দি—সেট বাংলার নিজস্ব একচেটে জিনিস নয়—আর তার সঙ্গে সত্যিকার বাংলার সম্বন্ধই বা কি ? পদ্মা ?...সেও অপূর্ব, সন্দেহ নেই—কিন্তু সে আদরে পালিত ধনীবধু একগুয়ে, তেজস্বিনী, শক্তিশালিনী, যা খুশি করে, কেউ আটকাতে পারে না—সবাই ভয় করে চলে-খামখেয়ালী—রুপবতী—তবে মিষ্টি নয়—high-bred রূপ ও চালচলন। ঘরকন্ন পাতিয়ে নিয়ে থাকবার পক্ষে তত উপযোগী নয়। কলকাতা ফিরে পরদিনই নীরদবাবুর বাড়িতে চায়ের নিমন্ত্রণ হল সন্ধ্যায়! আমার আবার একটু দেরি হয়ে গেল। মুশীলবাবু মাঝের দিন আমার বাসায় এসেছিলেন—বঙ্গত্র অফিসে আমার IPhone করেছিলেন—ষাবার সময় পার্ক সার্কাস থেকে ওঁর বাসা হয়ে গেলাম । সতীশের সঙ্গে একটা আফিমের দোকানে আজ আবার দেখা হল। কদিন ধরেই উড়িষ্যা ও মানভূমের সেই স্বপুরাজ্য মনে পড়চে–বিশেষ করে মনে পড়চে আসানবলী ও টাটানগরের মধ্যবর্তী সেই বনটা—যেখানে বড় বড় পাথরের চাই-এর মধ্যে শালের জঙ্গল—পত্রহীন দ্য গাছগুলিতে হলদে কি ফুল ফুটে আছে—কেবলই ভাবচি ওইখানে যদি একটা বাংলো বেঁধে বাস করা যায়—ওই নির্জন মাঠ বন, অরণ্যানীর মধ্যে। অপরাহ্লে ও জ্যোৎস্নামী রাত্রিতে তাদের রূপ ডাবলেও মন অবশ হয়ে যায়। সকালে উঠে দীনেশ সেনের বাড়িতে এক বোঝা পরীক্ষার কাগজ পেশ করে এলুম। সারা পথে মুচুকুন্দ চাপার এক অদ্ভূত গন্ধ বিজয় মল্লিকের বাগানে একটা গাছে কেমন খোকা খোৰা কাচা সোনার রঙের ফুল ধরেচে। বড় লোভ হল-ট্রাম থেকে নেমে বাগানের ফটকের কাছে গিয়ে দারোয়ানকে বললাম—ঐ গাছতলাটায় একবার যেতে পারি । সে বললে— নেছি। সংক্ষেপে বললে, আমার সে মানুষ বলেই মনে করলে না। আবার বললুম—স্থ একটা ফুল নিয়ে আসতে পারি নে ? তলায়.তে কত পড়ে আছে। সে এবার অত্যন্ত Contemptuous ভাবে আমার দিকে চেয়ে পুনরায় সংক্ষেপে বললে—নেছি। তাল, নেহি তো নেছি—গড়ের মাঠে খিদিরপুর রোড়ের ধারে অনেক মুচুকুন্দ ফুলের গাছ আছে, ট্রামে আসবার সময় দেখে এসেচি, সেখান থেকে কুড়িয়ে নেব এখন। তারপর এলাম নীরদবাবুর বাড়ি। সেখানে খানিকটা গল্পগুজব করে গেলাম খামাপ্রসাদ