পাতা:বরেন্দ্র রন্ধন.djvu/২৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বরেন্দ্র রন্ধন।

বিশেষভাবে পরিচ্ছন্ন ও শুষ্ক হওয়া আবশ্যক। এরূপ পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার ব্যবস্থা না করিলে কাসুন্দি অচিরাৎ পচিয়া নষ্ট হইয়া যায়।

 বৈশাখ মাসে অক্ষয় তৃতীয়ার দিবসে আমাদের বাড়ীতে কাসুন্দি যে নিয়মে ‘উঠানের’ প্রথা আছে নিম্নে তাহা বিবৃত হইল।

 যতদূর সম্ভব উৎকৃষ্ট ও টাট্‌কা সরিষা (৷৹ দশ সের পরিমিত) সংগ্রহ করিয়া ঝাড়িয়া বাছিয়া লও। অতঃপর স্নানান্তে নূতন পরিষ্কৃত বস্ত্র পরিয়া সুচী হইয়া নূতন ধামায় বা ডালায় করিয়া ঐ সরিষা লইয় পুকুরে যাইয়া জলে ধোও। ধামায় পাঁচটা সিন্দুর ফোটা দিবে এবং নয় গাছি দুর্ব্বা, নয়টি ধান্য, পাঁচখানা শুক্না হলুদ ও পাঁচটি সপল্লব কাঁচা আম ধামায় দিবে। পরিষ্কৃত খোলা গোময়লিপ্ত বা ষাণ-বাঁধান জমীতে বা পরিষ্কৃত পাটী বিছাইয়া তদুপরি ঐ ধৌত সরিষা ‘নাড়িয়া’ শুকাইতে দাও। এদিকে একটা নুতন বড় হাঁড়িতে করিয়া পরিষ্কার জল আধ মণ জ্বালে উঠাও। বহুক্ষণ ধরিয়া এই জল সিদ্ধ কর। যখন জল ‘মরিয়া’ অর্দ্ধেক মাত্র অবশিষ্ট থাকিবে তখন জল ঠিক হইয়াছে অর্থাৎ সম্পূর্ণরূপে জীবানু বর্জ্জিত হইয়াছে বুঝিতে হইবে। এই জল সিদ্ধ করা ব্যাপারটি এই নিমিত্ত সময় ও ব্যয় সাধ্য হইলেও অত্যাবশ্যক। এই জল সিদ্ধ প্রক্রিয়াকে ‘মৌ-জ্বাল’ দেওয়া কহে। আধমণ জল সিদ্ধ করিয়া যে ৷৹ দশ সের জল অবশিষ্ট থাকিবে তাহা পাঁচটা নূতন হাঁড়িতে সমপরিমাণে বিভাগ করিয়া রাখ।

 ওদিকে ধৌত সরিষা সম্পূর্ণ শুষ্ক হইলে ঐ পাঁচখানা শুক্না হলুদ সমেত ঢেঁকিতে কুট। বলা বাহুল্য ঢেঁকির মুষল ও গড় সুপরিচ্ছন্ন হওয়া আবশ্যক। সরিষা কুটিবার প্রারম্ভে পাঁচটি সিন্দুর ফোঁটা দিয়া টেকিকে বরণ করা হইয়া থাকে এবং সরিষা কুটিবার সময় ঘন ঘন উলু-জোকার দেওয়া হইয়া থাকে। সরিষা ধোবার সময়ও উলু-জোকার দেওয়া হইয়া থাকে।