পাতা:বরেন্দ্র রন্ধন.djvu/২৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
চতুর্দ্দশ অধ্যায়—আচার ও কাসুন্দি।
২৩৭

ইহা সেওয়ায় সরিষা কুটিবার সময় কাসুন্দি যাহাতে দীর্ঘকাল স্থায়ী হয় তাহা কামনা করিয়া বিবিধ ছন্দে স্তুতী-মন্ত্র পাঠ করা হইয়া থাকে।

 সরিষা কুটা শেষ হইলে তাহা সুপরিচ্ছন্ন চালুনীতে (আটা-চালায়) ছাঁকিয়া লও। ‘ফাকী’ যাহা বাহির হইবে তাহা লইয়া ঐ পাচ হাঁড়িতে বিভক্ত সিদ্ধ জলে ক্রমে ঢাল এবং বাঁশের ‘তলাশীর’ (বাতা) দ্বারা নাড়িয়া নাড়িয়া মিশাও। এইরূপে জমে সমস্ত সরিষা গুঁড়ার ‘ফাকী’টুকু ঐ জলের সহিত মিশাও। সরিষা গুঁড়া মিশান পর জল ঠাণ্ডা হইলে হাঁড়ীর মুখে সরা চাপা দিবে।

 এই সরিষা গোলা যেন বিশেষ গাঢ় না হয়—তলাশীর গায়ে জড়াইয়া যায় এমত তরল মত থাকে, অথচ ‘জলো’ গোছও না হয়। আন্দাজ মত নুণ ও এক পোয়া টেক হলুদ গুঁড়া মিশাও।

 অতঃপর সরিষা গোলাকে সরিষা গুঁড়ার ‘মলিখা’ ও উক্ত কাঁচা আমের কিঞ্চিৎ অংশ দ্বারা ‘সাধ দিয়া’ তাহাতে নিম্নলিখিত ভাজা ঝালের গুঁড়া মিশাও। এই ‘ঝাল’ অথবা যাহাকে কাসুন্দি উঠানের পরিভাষায় ‘বার-সজ’ কহে তাহা লইয়া কাট-খোলায় ভাজ। ঢেঁকিতে কুটিয়া গুঁড়া কর। চালুনীতে ছাক। ফাকী যাহা বাহির হইবে লইয়া সরিষা গোলার সহিত মিশাও। মিশ্রন কালে ‘তলাশী’ দ্বারা নাড়িয়া নাড়িয়া উত্তমরূপে মিশাইবে। ঝালের আন্দাজ কাসুন্দি চাখিয়া স্থির করিবে।

 অতঃপর পূর্বোক্ত পাঁচটি কাঁচা আমের সহিত আরও কিছু কাঁচা আম ছুলিয়া কাটিয়া কুঞা ফেলিয়া লও। ঢেঁকিতে অল্প কুটিয়া থেঁৎলাইয়া কাসুন্দিতে মিশাও। এরূপ আন্দাজে আম মিশাইবে যাহাতে কাসুন্দির স্বাদ ঈষদম্ল হয়।

 এইবারে আম বা ঝাল-কাসুন্দি প্রস্তুত সমাধা হইল। এক্ষণে এই কাসুন্দি কয়েক দিবস ধরিয়া রৌদ্র-পক্ব করিয়া খাও। বিশেষ সুচীতা সহকারে পরিচ্ছন্ন শুষ্ক ঘরে কাসুন্দি উঠাইয়া রাখিবে, তবেই অনেকদিন অবিকৃত