পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૨૭ বিভূতি-রচনাবলী পাটের কলে নিবারণ মিস্ত্রীর সেই গোলপাতার ঘরখানা, শীতের দিনে গদাফুল-ফোট নিকানো দুপাশে তক্তকে উঠেনি,- সব যেন পুরাতন, পরিচিত বন্ধুর মতো আমাদের প্রাণে তাদের স্নেহস্পর্শ পাঠিয়ে দিলে, বড় ভাল লাগল আজ বেলুড়। সন্ধ্যার আগেই মোটরে চলে এলাম কলকাতায়। কাল গিয়েছে পূর্ণিমা, আজ প্রতিপদের চাদ রাত সাড়ে সাতটার পরে উঠল। ধোয়া নেই, এই যা সৌভাগ্য। অনেকদিন পরে আজ আমড়াতলার গলির মুখে গিয়ে পড়েছিলাম—এতদিন চিনি নি— আজ চিনেচি । এবার ইস্টারের ছুটিটা কাটাতে এলুম এখানে। সেবার এসে নীল ঝরনার যে উপত্যক দেখে গিয়েছিলাম—আবার জ্যোৎস্না রাত্রে নিমফুল ও শালমঞ্জরীর ঘন মুবাসের মধ্যে সে সব স্বান দেখলাম। রানীঝরনার পথে পাহাড়ে উঠে গোড় জাতির গ্রামে আবার বেড়িয়ে এলাম। আজ বেড়িয়ে এলাম সকালে কাকড়গাছি ঘাট। সারা পথের দুধারে বন, তবে এখন শাল ও মহুয়া গাছ প্রায় নিম্পত্র—তলায় সদা সাদা মহুয়৷ ফুল টুপটাপ ঝরে পড়চে । রাধামাইনস ছড়িয়ে থানিকটা গেলে বন বেশ ঘন, বড় বড় ছায়াতরুও আছে। কাকড়গাছি ঘাটটা বড় চমৎকার,—এখানে একটা জায়গার চারিধারেই পাহাড়ের শ্রেণী। ছোট একটা ঝরনা আছে—তবে এখন ঝরনাতে জল খুবই কম। ওদিক বনগাছের শোভা এদিকের চেয়ে সুন্দর। অপরাহ্লে বা জোৎস্নারাত্রে যে এসব স্থানের শোভা অপূর্ব হবে সেটা বুঝতে পারা খুব কঠিন নয়। নীরদবাবুরা গরুর গাড়িতে এলেন—আমি দেখলাম ওর চেয়ে হেঁটে আসা অনেক বেশী আরামের। বাংলোর সামনে ছোট বাঁধটাতে স্নান করে এলাম। জল বেশ ভাল। খুব সম্ভব আজই রাত্রে কলকাতাতে ফিরব । কাল রাখামাইন থেকে বৈকালে হেঁটে আমরা তিনজন চলে এলাম শালবনের মধ্যে দিয়ে অন্তহুর্যের আলোয় রাঙানো সুবর্ণরেখা পার হয়ে। আজ সকালে গালুডির বাংলোর পিছনে সেই শিলাখণ্ডে বসে লিখচি। কাল রাতের চাদটা যে কখন কালাঝোর পাহাড় শ্রেণীর পিছন দিয়ে উঠল তা মোটেই টের পাই নি—স্টেশন থেকে এসে দেখি চাদ উঠে গিয়েচে । কিন্তু অনেক রাত্রে স্টেশনের পথের ছোট ডুরিটার সাদা সাদা কোয়ার্ট পাথরের চাইগুলো, ছোট বটগাছটা অদ্ভূত দেখাচ্ছিল। আজ সকালে গুইরাম গাড়োয়ানের সঙ্গে দেখা, সে বললে ঠিকরী ও ধারাগিরির পথের জঙ্গলে খুব বন, বাঘের ভয়ও আছে। এবার আর যাওয়া হল না, পূজার সময় যাব। এবার জীবনটা খুব গতিশীল হয়ে উঠেচে . এই তো গত শনিবারের রামনবমী দোলের দিনও বারাকপুরে ছিলাম। দখলাম আমাদের বাড়ির পিছনে বঁাশ বনে কিরকম শুকনে পাতার রাশ পড়েচে, নদীর ধারে চটকাতলা খালের উচু পাড়ে কিরকম ঘেটুফুল ফুটেছে, রঘুদ্রাসীদের বাড়িতে ওরা আবার এসেচে, পথে যুদ্রাসীর সঙ্গে দেখা। ভারপরে খয়রামারির