পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

శిరి3 বিভূতি-রচনাবলী নদীর ঘাটে চলে গেলাম ! পথে জেলি বললে শিগগির নেকে তলায় যান, ভয়ানক আম পড়চে । কিন্তু আজ আর আম কুড়েবার দিকে আমার খেয়াল নেই। আমি নদীর ধারে কালবৈশাখীর লীলা দেখতে চাই। নদীজলে নামবার আগেই বৃষ্টি এল। বড় বড় ফোটায় বুষ্টি পড়তে লাগল-জলে নেমে দেখি জল গরম, যেন ফুটচে। এপার ওপার সর্ণতার দিতে লাগলাম কালো জলে ঢেউ উঠেচে, মুখে নাকে মাথায় ঢেউ ভেঙে পড়চে, ওপারে চরের ওপর বিদ্যুৎ চমকাচ্চে, বম্ভেবুড়ে গাছ ঝড়ে উন্টে উন্টে যাচ্চে, বৃষ্টির ধোয়ায় চারিধার অন্ধকার হয়ে গেল, নদীজলের অপূর্ব মুম্ৰাণ বেরুচ্চে, দূর দূর সমুদ্রের কথা মনে হচ্চে। এমনি কত ঝটিকাময় অপরাহ্ল ও নীরন্ধ অন্ধকারময়ী রাত্রির কথা—প্রকৃতির মধ্যে এমনি মিশে হাত ধরাধরি করে চলা—ঐ খামল ডালপালা ওঠা শিমুলগাছ, সাইবাবল গাছ—এই তো আমি চাই। এদের সঙ্গে জীবন উপভোগ করব—ঐ ঝোড়ে-মেঘে আমার ভগবানের উপাসনা, ঐ ঠাকু নীল বিদ্যুতে, এই কালো নদীজলের ঢেউয়ে, ঝড়ের গন্ধে, বাতাসের গন্ধে, বৃষ্টি ভেজা মাটির গন্ধে, চরের ঘাসের কঁাচা গন্ধে— কাল ফুঠীর মাঠে বসে এই সব কথা ভাবছিলাম। তারপর নদীজলে নাইতে নেমে কেমন একটা ভক্তির ভাব মনে এল । সমস্ত দেহ মন যেন আপনা-আপনি মুয়ে পড়তে চাইল । এ ধরনের ভক্তি একটা বড় blis৪, জীবনে হঠাৎ আসে না। যখন আসে, তখন বিরাট রূপেই আসে, আনন্দের বন্যা নিয়ে আসে প্রাণের তীরে। এ Realisation যেমন দুর্লভ, তেমনি অপুর্ব। আমি ভগবানকে উপলব্ধি করতে চাই । তার এই লক্ষ বিরাট রূপের মধ্য দিয়ে। এবার মোটে বৃষ্টি নেই—পথঘাট এখনও শুকনো খটখঠে, অঙ্কবার এমন সময় খন ডোব জলে ভরে যায়, কুঠার মাঠের রাস্তায় কাদা হয়। তবে এবার সোদালি ফুল , কমে অসচে, বেল ফুলের গন্ধেরও তেমন জোর নেই। কাল বিকেলে পাচি এসেচে। সে, আমি, খুকু, রাণু মায় ন’দি ক'জনে কাল বসে কালিদাসের মেঘদূত ও কুমার-সম্ভবের চর্চা করেচি। বিকেলে আমি কুঠার মাঠে বেড়াতে গেলাম। ঘাটে স্বান করতে এসে দেখি ওরা সবাই ঘাটে—খুকু ও রাণু সীতার দিয়ে গিয়েচে প্রায় বাধালের কাছে। আমি স্নান সেরে উঠে আসচি, কালো তখন গেল শিমুলতলাটার কাছে। আমি বললুম, তোর মা ঘাটে তোকে ডাকচে। সে যাই’ বলে একটা বিকট চীৎকার করে চলে গেল । একটু পরে দেখি খুকু আমায় ডাকচে—বাশবন প্রায় অন্ধকার হয়ে এসেচে —ও ঘাট থেকে আসবার সময় বোধ হয় অন্ধকার দেখে ভয় পেয়েচে । আমি দাড়িয়ে ওকে সঙ্গে করে নিয়ে এলুম। আজ ওবেলা স্বানের সময়ে মনে কি যে এক অপূর্ব ভাব এসেছিল ! প্রতিদিনের জীবন এই মুক্তরূপ প্রকৃতির মধ্যে সাধক হয় এখানে—এইসব ভাবে ও চিন্তার ঐশ্বর্ষে। আজ অনেক কাল পরে নদির কাছ থেকে গৌরীর হাতের লেখা একখানা গানের খাতা পেয়েচি । এভদিন কোথায় এখানা পড়ে ছিল, বা কি করে নদির হাতে এল—তার কোন