পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8e বিভূতি-রচনাবলী রেলের পুল দিয়ে চন্দ্ররেখা গ্রামের মধ্যে দিয়ে অনেক রাত্রে ফিরলাম রাখামাইনসের বাংলোতে। নদী পার হবার সময়ে সেই ছবিটা—সেই নদীর পরে জ্যোৎস্নভর আকাশে একটিমাত্র নক্ষত্র দেখা যাচ্চে, নীচে শিলাস্তৃত সুবর্ণরেখা, পশ্চিম তীরে ঘন শাল জঙ্গল, দূরে হ্যামপুর থানার ক্ষীণ আলো, লাইনের বামদিকের গাছগুলো আধ জ্যোৎস্নায় আধ অন্ধকারে দেখা যাচ্চে না, কিন্তু ফুটন্ত ছাতিম ফুলের ঘন সুগন্ধ ; বাংলোতে ফিরে এসে দেখি —প্রমোদবাবু এসে বসে আছেন। পরদিন আমরা সবাই মিলে সাটকিটার জঙ্গলের পথে গেলাম—তারপর দিন গালুডি থেকে চারুবাবু, সুরেনবাবু ও মেয়েরা এলেন । চার নম্বর খাদানের নীচের জঙ্গলের মধ্যে পিকনিক্‌ হল। বুকু, আশা, আমি, চারুবাবু, সুরেনবাবু ও ভিক্টেরিয়া দত্ত বলে একটি মেয়ে সিদ্ধেশ্বর ডুংরি আরোহণ করলাম। একেবারে সিদ্ধেশ্বরের মাথায়। একটা অম্লমধুর বনফলের কাচ। ডাল ভেঙে নিয়ে পাহাড়ে উঠলাম—তৃষ্ণ নিবারণের জন্তে । সেদিন আমি স্টেশনের বাইরে কি একটা গাছের ছায়ায় পাথরের ওপর বসে রইলাম যেমন সেদিন সকালে আমি ও প্রমোদবাবু পিয়ালতলার ছায়ায় প্রকা গু শিলাখণ্ডে শুয়ে বটগাছটার দিকে চেয়ে প্রভাতী আলোতে অজানা কত কি পার্থীর গান শুনছিলাম।. বেলা পড়ে এসেচে...বারাকপুরে বসে এইসব কথা লিখতে লিখতে মন আবীর ছুটে চলে যাচ্চে সেই সব দেশে। শীতের বেলা এত তাড়াতাড়ি রোদ রঙ হয়ে গাছের মাথায় উঠে গেল ! বকুলগাছের মাথায়, বাশগাছের মাথায় উঠে গিয়েচে রোদ একেবারে । সেই সুন্দর লতাপাতার গন্ধটা এবার ভরপুর পাচ্চি—ঠিক এই সময়ে ওটা পাওয়া যায়। কাল এখানে চড়কতলায় কৃষ্ণযাত্র হল, জ্যোৎস্নারাত্রে গাছেপালায় শিশির টুপটাপ ঝরে পড়ছে—আমি চালতেতলার পথে এক শুধু বেড়িয়ে বেড়াতে লাগলাম। কি রূপ দেখলাম কাল জ্যোৎস্নাভরা রহস্যময়ী হেমন্ত রাত্রির! কাল নদীর ধারে বিকেলেও অনেকক্ষণ বসেছিলাম । কাল বিকেলে কুঠীর মাঠে বেড়াতে গিয়ে পাটলবর্ণের মেঘস্তুপের দিকে চোখ রেখে একটা জলার ধারে বসলাম—গাছপালার কি রূপ! সেই যে গন্ধটা এই সময় ছাড়া অন্ত সময় পাওয়া যায় না—সেই গন্ধ দিন রাত সকাল সন্ধ্য আমাকে যেন অভিভূত কয়ে রেখেচে । আজ কদিন বর্ষা পড়েচে–বসে বলে আর কোন কাজ নেই, খুকুদের সঙ্গে গল্প করচি, কাল সারাদিনই এইভাবে কেটেচে, তবুও কাল নদীতে এপাড়ার ঘাট থেকে ওপাড়ার ঘাটে সাতার দিলাম, একটু ব্যারামের জন্তে। আজ সকালে, নদীর ঘাটে ভোরবেল গিয়ে মেঘমেদুর আকাশের শোভায় আননা পেলাম। এই শিমুলগাছগুলো আমাদের এদেশের নদীচরের প্রধান সম্পদ। এগুলো আর সাইবাবলা না থাকলে ইছামতীর তটশোভা অনেক পরিমাণে ক্ষুন্ন হত। জাজ সকালে নদীর ঘাটে গিয়ে চারিদিকের আকাশে চেয়ে চেয়ে দেখলাম মেঘ অনেকটা