পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

३8१ বিভূতি-রচনাবলী আমার কেবল টেচিয়ে বলে—স্বাদ, এটা দেখুন, ওটা দেখুন। তারপর ফিরে এসে ছেলেদের নিয়ে গোপালনগরে গেলাম কালী পূজোর ঠাকুর দেখাতে। হাজারীর ওখানে অনেক রাত হয়ে গেল তাস খেলতে বসে—অনেক রাত্রে বাড়ি ফিরি। পরদিনও আবার কুঠার মাঠে যাওয়ার কথা ছিল—ওরা সবাই গেল, কিন্তু মনোরমার ভাই কালো কুঠীর জঙ্গলে হাটুটা বেজায় কেটে ফেললে, তার ফলে সকলেরই বেড়ান বন্ধ হল। রাত্রে খুকুকে অনেক গল্প শোনালাম অনেক রাত পর্যন্ত । আজ সকালে ভ্রাতৃদ্বিতীয়া। রায়বাড়ির পাচি কঁাদচে, ওর দ্বাদ আশু মাসখানেক হল মারা গিয়েচে, সেই জন্তে। পাড়াগায়ের মেয়ের ধরনে ‘ও ভাই রে, বাড়ি এসো, বলে চেচিয়ে কাদচে। কিন্তু আমার মনে সত্যিই দুঃখ হল ওর জন্তে। পাচিকে এ গায়ের সব লোকেই "া, ছাই করে, সবাই ঘেন্না করে—সাজ পাচি ওদের সবারই বড় হয়ে গিয়েচে। তবুও তার প্রতি সহায়ুভূতি নেই কারুর—কান্না শুনে পিসিমা বলচেন, মুখ বেঁকিয়ে—আহা! মনে পড়েচে বুঝি ভাইকে। নৌকা করে বনগায়ে যাচ্চি সকালবেলা। চালকীর ঘাটে এসেচি—এবার এদিকের গড় ভেঙেচে। কেমন নীল রং-এর একটি পাখী বাবলা গাছে বসে শিস দিচ্চে। নৌকোর দুলুনিতে লেখার বড় ব্যাঘাত হচ্চে। নীল কলমীর ফুল,হলদে বড় বড়বন ধুধুলের ফুল ফুটেচে। আর এক রকম কি লতার কুচে কুচে হলদে ফুল ফুটে চালতেপোতার বাকে ঝোপের মাঝে আলো করে রেখেচে—সে যে কি অপূর্ব সুন্দর তা ভাষায় বর্ণনা করা যায় না! এই ফুলের নাম জানি নে, যেন হলদে নক্ষত্র ফুটে আছে—ছোট ছোট ক্ষুদে ক্ষুদে যেন নববধূর নাকছবি। কাতিকের শেষে এই ফুলটা ফোটে জেনে রাখলাম, আবার আসচে বছর দেখতে আসবো। এতদিন এ ফুল আমার চোখে পড়ে নি। হেমস্তে এত বনের ফুলও ফোটে এদেশে ঝোপের মাখা আলো করে সবুজ পাতালতার মধ্যে তিৎপল্লার ফুল, ক্ষুদে ক্ষুদে ঐ অজানা ফুল, মাঝে মাঝে বড় বড় বনকলমীর ফুল—কি রূপ ফুটেচে প্রভাতের। কাশফুল তো আছেই মাঝে মাঝে, নদী তীরের কি অপূর্ব শোভা এখন—ভা ছাড়া পুষ্পিত সপ্তপর্ণও মাঝে মাঝে যথেষ্ট। ঐ অজান ফুলট মাঝিকে দিকে ঝোপ থেকে পাড়িয়ে অনলাম—দশটি করে ছোট ছোট পাপড়ি—ছটা করে পরাগ কোষ ব৷গৰ্ভকেশর প্রত্যেকটাতে। জলে কচুরীপানার ফুল ফুটেচে, অনেকটা কাঞ্চন ফুলের রং কিন্তু দেখতে বড় চমৎকার—একটা লম্বা সরল সবুজ ডাটায় খোকা থোকা অনেকগুলো ফুল—ঐ মুদার ফুলের জন্যেই কচুরীপান স্বটির মধ্যে অক্ষয় হয়ে থাকবে-ভগবানের কাছে সুন্দরের সার্থকতা অমর—তার utility-টা গৌণ। মাঝি গল্প করছিল, এবার অনেকে ইছামতীতে মুক্ত পেয়েছে ঝিনুক তুলে। এ সময়ে বঙ্গেৰুড়ে গাছেও শাল মঞ্জরীর মত দেখতে সবুজ রং-এর ফুল ফুটেছে—আর এক প্রকার জলজ ঘাসের নীল ফুল ফুটেচে–এর রং ঠিক ভিসির স্কুলের মত নীল। এক একটা ছোট গাছের মাথায় ছোট কোপে ঐ ক্ষুদে ক্ষুদে অজানা ফুল ফুটে আলো করচে।