পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૨8૭ বিভূতি-রচনাবলী এই ঘরের বদ্ধ ও অমুক্তির পরিবেষ্টনীর মধ্যে ভগবান নেই, তাকে জাজ বিকেলে খুঁজবো স্বক্ষয়পুরের কিংবা নতিডাঙ্গার বাওড়ের ধারে মাঠে, নীল আকাশের তলায়, অন্ত-বেলার পার্থীদের কলকাকলির মধ্যে। তাই ওখানে গিয়ে বলেছিলাম। বসে বসে কিন্তু অজিমাবাদের কথা মনে এলে । এই পৌষ মাসে ঠিক এই সময়ে আমি সেখানে খেতুম, ঠিক এই বিকেলে রাঙা রোদের আভা মাখানে তিন টাঙার বনের ভেতর দিয়ে বটেশ্বরনাথ পাহাড়ের এপারে যে তুম ঘোড়া ছুটিয়ে বেড়াতে—কলাইক্ষেত থেকে কলাইয়ের বোঝা মাথায় মেয়ের আসতে, গঙ্গার বুকে বড় বড় পাল তুলে নৌকা চলে যেত মুঙ্গেরের দিকে, ভীমদাস টোলায় আগুনের চারিধারে বসে গ্রামের লোকে গল্পগুজব করতে । ফিরবার পথে বাধের ওপর ওঠবার সময় দেখতুম চারিধারের মাঠ কুরাসায় ভয়ে গিয়েচে– সেই ছবিগুলো মনে হলো। তার চেয়ে যে আমাদের দেশের ভূমিত্র, এই নির্জন শাস্তিতে ভরা অপরূপ সুন্দর পল্লীপ্রাস্ত, ওই মরগাঙের শুকনে আগাড়ের নতুন কচি ঘাসের ওপর চরে বেড়াচ্চে যে গরুর দল, ওই দুরের বটগাছটা, মাঠের ওপারের বনফুল ফোটা বনঝোপ, এই ডাহুক পাখীর ডাক, গ্রামসীমার বঁাশবন—এসব যে রূপের বিত্তে নিঃস্ব তা নয়, বরং আমার মনে হয় এরা বিহারের সেই বৃক্ষলতা-বিরল প্রাস্তরের চেয়ে অনেক সমৃদ্ধির, কিন্তু সেখানে একটা জিনিস ছিল, যা বাংলাদেশের এ অঞ্চলে অস্তত: নেই—Space | Wide open Space | দুরবিসপী দিশ্বলয়, দূরত্বের অনুভূতি, একটা অদ্ভুত মুক্তির আনন্দ—এ যেমন পেয়েছিলাম ইসমাইলপুরের দিয়ারান্তে ও আজমাবাদে—আর কোথাও তা মিলবে না। আজ খুকু দুপুরে খানিকট বসে রইল—আমি মাঠে বেড়াতে যাবে বলে গোপালনগরে গেলাম না। মরগাঙের আগাড়ে আজও অনেকক্ষণ গিয়ে বসেছিলাম। বেলেডাঙ্গার পুলের কাছে ফিরবার পথে কি একটা বনফুলের সুগন্ধ বেরুল—খুজে বার করে দেখি কাটাওয়াল একটা লতার ফুল। লতাটা আমি চিনি, নাম জানিনে। ননী সেকরার দোকানের কাছেই ঝোপটা। ননী কাদা দিয়ে রূপো গালাবার মুচি গড়চে। ওদের সঙ্গে খানিকট। গল্প করবার পরে নদীর ধারে এসে খানিকটা দাঁড়ালাম—ওপারে কালপুরুষ উঠেচে, নীল Rigel-এর আলো নদীর জলে পড়েছে। নিস্তব্ধ সন্ধ্যায় নিঃসঙ্গ একা দাড়িয়ে ওপারের তারাটার দিকে চেয়ে থাকবার যে আনন্দ, যে অনুভূতি, তার বর্ণনা দেওয়া যায় না—কারণ অঙ্গভূতির স্বরূপ তাতে বর্ণিত হয় না, অথচ কতকগুলো অর্থহীন কথা দিয়ে বর্ণনা করতে গিয়ে অমৃভূতির প্রকৃতি সম্বন্ধে লোকের মনে ভুল ধারণ জন্মিয়ে দেওয়া হয়। এ অব্যক্ত, অবৰ্ণনীয়। আজ এই সন্ধ্যাতেই একটা উল্কাপাত দেখলাম-ওপাড়ার ঘাটের মাঝামাঝি আকাশে— প্রথমে দেখা, তারপর নীল ও বেগনি রং হয়ে গেল জলতে জলতে—জলে ছায়া পড়ল। আমি আমন ধরনের উল্কাপাত দেখিনি ! আজ এখানে বেশ শীত পড়েচে। দুপুরের আগে ফুল-ফোঁট মাঠে বেড়াতে খাওয়া