পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ՀեՀ বিভূতি-রচনাবলী পুরাতত্ত্ব আলোচনা করে সময় কাটানো অসম্ভব ও একঘেয়ে হয়ে উঠলো। একদিন বিকেলের দিকে ওদের বাড়িতে ছড়ি হাতে নিশ্চিন্তমনে বেড়াতে গেলাম—যেন এই পথ দিয়েই কাজের খাতিরে যেতে যেতে একবার দেখতে আসা গেল কে কেমন আছে। গেটের মধ্যে ঢুকে চোখ পড়লো বাড়ির ওপরের ঘরে সব জানালা বন্ধ। উকীলবাবুর অফিস-ঘরের সামনে রামনিয়া বেয়ারাও টুলের ওপর বসে নেই, বাইরে কোথাও একট...কি করা যায় বা কাকে ডাকবো ভাবছি এমন সময় উকীলবাবুর পুরানো খানসামা ছকু বাজার থেকে কি কিনে নিয়ে গেট দিয়ে বাড়ি ঢুকেই আমাকে দেখে থমকে দাড়িয়ে গেল । —বাবু আপনি ? —ই্যা, এখান দিয়ে যাচ্ছিলাম, তাই। বাবু কোথায় ? —আপনি শোনেন নি, জানেন না কিছু ? পরে সে একে একে যা বলে গেল তা সংক্ষেপে এই যে, গত ভাদ্রমাসে উকীলবাবু রক্তাধিক্য রোগে হঠাৎ হার্টফেল করে মারা যান। তার ওপর বিপদ-বড় দিদিমণি পরীক্ষার ফেল হন এবং তারপরই তার মাথা খারাপ মত হয়ে গিয়েছে—তিনি আছেন তার মামার বাড়ি। বীণাকে নিয়ে তার মা নিজের বাপের বাড়ি চলে গিয়েছেন এবং সেইখানেই আছেন। বর্তমানে এ-বাড়িতে রঘু মিশির দারোয়ান আর সে ছাড়া আর কেউ থাকে না, অস্ত চাকর-বাকরের জবাব হয়ে গিয়েছে । ডাক-বাংলোয় ফিরে সেদিন কোনো কাজে মন গেল না। প্রতিমার কথা ভেবে আমার মন করুণার পূর্ণ হয়ে গেল। ডাকবাংলোয় নির্জন বারানার অন্ধকারটাও যেন অশ্রুসজল হয়ে উঠলো ওর নানা ছোটখাট কথাবার্তার স্মৃতিতে ;.পরদিন সকালে আমি হঠাৎ আবিষ্কার করলাম যে ব্যাঙ্কের শেয়ার বিক্রির কাজটা যে পরিমাণে হওয়া উচিত ছিল তা হয় নি । সকাল-সন্ধ্যায় সব সময় মহা উৎসাহে ঘুরে ঘুরে অফিসের কাজ করে বেড়াই আর কলকাতার অফিসে বড় বড় রিপোর্ট পাঠাই । দিন পাচেক পরে সেদিন সকালে স্নান করে বসে খবরের কাগজ পড়ছি এমন সময় ডাকবাংলোর বেয়ার বললে-আপ কে পাস এক আদমি আনে মাংতা হায়... একটু পরেই দেখি উকীলবাবুর বাসার ছকু খামসাম বেয়ারার সঙ্গে ঘরে ঢুকছে। আমি আগ্রহের স্বরে বললাম—কি মনে করে’ ? ছকু বললে—পরশু ছোটদিদিমণি বাড়ি এসেছেন মার সঙ্গে। আপনি সেদিন বাসায় গিয়েছিলেন শুনে আমায় বলে দিলেন, ডাকবাংলোয় গিয়ে দেখে আয় তিনি আছেন কিনা, থাকলে আমাদের বাড়ি অবস্তি করে একবার আসতে বলে আয় আমার নাম করে’—আজই বিকেলে যেতে বলে দিয়েছেন! 蟾 আমি তাকে বলে দিলাম, অফিসের কাজ সেরে বিকেলের দিকে আমি নিশ্চয়ই যাবে। বিকেলে যখন বীণাদের বাড়ি গেলাম তখন সন্ধ্যা হবার খুব বেশি দেরি ছিল না। রাস্তার ধীরে ধারে আলো দিয়েছে, মোড়ে মোড়ে ফিরিওয়ালা ‘চাই গরম গরম বাথর খানি’ বলে