পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিভূতি-রচনাবলী راتياج কিন্তু এ কোন বীণা ? চার বছর আগে সে চঞ্চল বালিকা নয়, অনিন্যমুনার, ধীরা সংস্কৃত তরুণী ! মেয়ের মামা পরিচয় দিলেন মেয়েটি বেথুনে ফাস্ট ইয়ারে পড়ে, ম্যাটিক ফাস্ট ডিভিসনে পাস করেছে, পড়াশুনায় বেশ ভাল ; বাপ ঢাকার উকিল ছিলেন, মারা গিয়েছেন। বীণা চোখ নিচু করেছিল, আমার দিকে চায় নি—সে বোধ হয় জানেও না যে আমিই পাত্র। বাড়ির বার হয়ে এসে বন্ধুরা আমাকে ভাগ্যবান বললেন। ও-রকম পাত্রী অদৃষ্টে জোটা ইত্যাদি । কাউকে কোন কথা বললাম না। শুভদৃষ্টির সময় কাপড় ঢাকা দিয়ে দেওয়া হোল না, এমনই দুজনে দুজনের দিকে চেয়ে দেখলাম—বীণার মুখের অবস্থা ফটোগ্রাফ নেবার যোগ্য হয়েছিল। অনেক রাত্রে বাসরে সে শাসনের সুরে বললে—আপনি তো আচ্ছা ? তলে তলে বুঝি এই সব কু-মতলব ছিল ? আমি উত্তর দিলাম—আমি বুঝি জানি ? মেয়ে দেখবার দিন তো আমি জানলাম। আগে জানডে পারলে তুমি বোধ হয় এতে রাজী হতে না—না ? বীণা রাগে ঘাড় দুলিয়ে মুখ অন্যদিকে ফিরিয়ে নিলে। আমার দিকে না চেয়েই বললে— কোথায় ছিলেন এতদিন নিরুদেশ হয়ে ? অার এলেন না কেন সেবার ? সংক্ষেপে কৈফিয়ত দেবার পর আগ্রহের সুয়ে জিজ্ঞাস করলাম—প্রতিমাকে দেখছি না, সে কি এখানে আসে নি আজ ? এবার বীণা আমার মুখের দিকে চাইলে, চেয়ে চুপ করে রইলো। তারপর সংস্থত মুরে বললে-জানেন না ? দিদি নেই—সেবারই মাঘ মাসে মারা যায়। মাথা তার ভাল হয় নি। আপনার নাম বড় করতো, আমার কাছে, কতদিন বলেছে । রাক্ষস-গণ বিপত্নীক হবার অল্পদিন পরেই সুরেশ সলিমপুর স্টেশনে বদলী হয়ে গেল। মাঠের মধ্যে ছোট স্টেশন, নিকটে লোকজনের বাস খুবই কম। রেলের কোয়ার্টারে বড়বাবু পুত্র-পরিবার নিয়ে বাস করেন। কিছু দূরে একটা ছাত্রবৃত্তি স্কুল আছে—তার শিক্ষকগণ স্কুলের নিকটেই একটা বড় আটচালা ঘরে মেস করে থাকেন। এ ছাড়া বড় একটা বসতি নেই। বিকেলের ট্রেনখানা রওশ করে দিয়েই মুরেশ স্কুল-মাস্টারের মেসের বাসায় তাস খেলার আড়ায় যায়। সন্ধ্যা সাতটার সময় ডাউন-যাত্রী-গাড়ি আসবার পূর্ব পর্যন্ত সেইখানেই থাকে। পরে খানিকক্ষণ স্টেশনের কাজকর্ম করবার পর রাত্রি সাড়ে ন’টার শেষ গাড়ি রওনা করেই নিজের কোয়াটারে ছোট ঘরটিতে ফিরে এসে ও-বেলার রাখা বালি রুটি-তরকারী খাওয়ার