পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

శిసెly বিভূতি-রচনাবলী চালিয়েছে এমন কোনো লোক ছিল না। তার কারণ এই যে, ওটা খোড়া হচ্ছিল ঢাকা P. W. D. থেকে । এই ঢিবি দুটোর বড়টাকে ওখানকার লোকে বলে "নাস্তিক পণ্ডিতের ভিটা" ও ছোটটাকে বলে “টেলিবাটীর ভিটা"। কারুর মতে এই নাস্তিক পণ্ডিত হলেন, বৈষ্ণব ভক্তিশাস্ত্রকার বল্লভাচার্য। তিনি শেষ বয়সে বৈষ্ণব ধর্ম ত্যাগ করে, শঙ্কর বেদান্তের ভক্ত হয়ে পড়েছিলেন। এজন্ত দেশের লোকে তার শিষ্যত্ব গ্রহণ করতে নারাজ হয়। কেউ কেউ বলেন, বল্লভাচার্য বিক্রমপুরের ত্রিসীমানায়ও জন্মান নি। তাদের মতে ওটা ষোড়শ শতাব্দীর প্রসিদ্ধ নৈয়ায়িক শ্ৰীকৃষ্ণ তর্কালঙ্কারের ভিটা । যাক সে কথা। আমি কিন্তু জানতে পেরেছি ওখানে কে বাস করতেন। আমি যা জানতে পেরেছি, পূর্বে কেউ কেউ তা আনাজ করেছিলেন, কিন্তু জোর করে কিছু বলতে পারেন নি। আমি জোর করে বলতে পারি, কিন্তু বলি নি। কেন বলি নি, আর কেমন করে আমি তা জানলাম, সেইটেই বলবো । কিছুকাল ধরে ঢিবির ওপরকার বন কাটানো হোল । তারপর প্রকৃতপক্ষে খনন কার্য শুরু হোল। আমার সঙ্গে আমার বন্ধু ঢাকা মিউজিয়মের ক—বাবু ছিলেন। তিনি শুধু প্রত্নতত্ত্বজ্ঞ ছিলেন না, তিনি ছিলেন তার চেয়ে বেশী—প্রত্নতত্ত্বগ্রস্ত। প্রধানত: তারই আগ্রহে ও উৎসাহে আমরা এ কাজে হাড় দিই। দিনের পর দিন টিবি দুটোর সামনে একটা প্রকাও ঘোড়া-নিম গাছের ছায়ায় ক্যাম্প-চেয়ার পেতে আমরা তীর্থের কাকের মত বসে থাকতাম । আমার বন্ধুর চোখ মুখের ভাব ও উৎসাহ দেখে আমার মনে হোত, তিনি আশা করেন, খুড়তে খুড়তে একটা পুরানো আমলের রাজবাড়ি টাড়ি, বা একটা তাল-পাতায় লেখা আস্ত বাংলা ইতিহাসের পুথি, অভাবপক্ষে সেই অজ্ঞাত নাস্তিক পণ্ডিতের fossilশরীরটাই বা মাটির মধ্যে থেকে বেরিয়ে পড়ে। খুড়তে খুড়তে প্রথমে বেরুলো একটা মাটির ঘট। ও-রকম গড়নের ঘট এখন আর বাংলার কোনো জায়গায় তৈরী হয় কি না জানি না। ঘটের গলার নিচে থেকে তল পর্যন্ত curve-টি যে দিয়েছিল, সে গ্রাম্য কুমোরটিকে আমি শ্রদ্ধা করি। ঘটটার মধ্যে প্রায় আধঘট কড়ি। হিন্দুরাজত্বে কেনা-বেচার জন্তে কড়ি ব্যবহার হোত তা জান তো ? কোন অতীত দিনে গৃহস্বামী ভবিষ্যৎ দুদিনের ভয়ে কড়িগুলে। সযত্নে ঘট ভরে মাটির মধ্যে পুতে রেখে দিয়েছিলেন, সে ভবিষ্যৎ কত দিন হোল মুদূর অতীতে মিলিয়ে গিয়েছে, সঞ্চিত অর্থের আর প্রয়োজন হয় নি। ক্রমে ক্রমে আরও অনেক জিনিস বেরুতে লাগলো। আরও মাটির অনেক ভাঙা ঘট, কলসী, একখানা মরিচৗধরা লাল রঙের তলোয়ার, একটা প্রদীপ, ভাঙ্গা ইটের কুচে এবং সকলের শেষে বেরুলো একটা কাল পাথরের দেবীমূর্তি। এই মূর্তিটিকে নিয়েই আমার গল্প, অতএব এইটাই ভাল করে বলি" দেবীমূর্তিটি পাওয়া যায় টােলবাড়ির ভিটায়। মূর্তিটি রাজমহলের কালো পাথরের তৈরী, চকচকে পালিশ করা। বহু দিন মাটির তলার থেকে সে পালিশ যদিও নষ্ট হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু মোটের ওপর তখনও যা ছিল, তা খুব কম মূর্তিতেই আমি দেখেছি। মূর্তিটি সরস্বতী