পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

శ్రీశి\ు বিভূতি-রচনাবলী —আর একটু ,য়ে ধর বাবা বলিয়া সাতকড়ি গর্ধিত হাসিমুখে ও প্রশংসমান দৃষ্টিতে কীর্তনগানরত পুত্রের দিকে একবার চাহিয়া আবার চারিধারে চাহিতে লাগিলেন। গান একে একে অনেকগুলি হইল। সাতকড়ি বড় ছেলেকে একবার ফরমায়েশ করিয়া বলেন—মায়, গা তো সেই ওগো শুাম গুণমণি ?”...বড় ছেলের শেষ হইলে আবার সেজ ছেলেকে ফরমায়েশ করিতেছিলেন—ধর দিকি বাবা "মম মানস শুক পাথি " অনেকদিন শুনিনি তোর মুখে। কৈলেস খুড়ো, একটু ঠেকা দিয়ে যাও না, ভাল গানখানা" সাতকড়ি ছেলেদের লইয়া আসিবার পরে আসরে আর কেহ আমল পান নাই। সাতকড়ি নিজের ছেলেদের নিজে বtংবা দিয়া, হাসিয়া, চোখ বুজাইরা ঘাড় দোলাইয়া, ফরমায়েশ করিয়া এমন জমাইয়া তুলিলেন যে আর কাহারও আমল পাইবার যে ছিল না। খানিকটা পরে আগন্তুক শহরে ছেলেটি কি কথায় কথায় কলেজের গল্প তুলিল। সে নূতন কলেজে ভর্তি হইয়াছে, বয়স অল্প, দেখিতে সুশ্রী । এ ধরনের অজ পাড়াগায়ের লোকজনের মাঝখানে কথা বলিয়াও মুখ আছে। তাহার ইংরাজী বুক্‌নি-মিশানো কথাবার্তায় সাতকড়ি ভয় খাইয়া গেলেন। ছেলেটি বলিতেছিল—এ সব পাড়াগায়ে সে-সব কেই বা বোঝে ...এডুকেশন না থাকলে কি একটা জাত কখনো উঠতে পারে? ..কলেজে আজকাল মেয়ের পড়ছে—এমূ-এ, বি-এ পর্যন্ত পাস করছে—সেসব দিন কি আর আছে ? “দেখে আমুন একবার কলকাতায় গিয়ে । মেয়েদের এত লেখাপড়ার কথা এ গ্রামে কেহ শোনে নাই। কৈলাস ভট্টচার্য বিস্ময়ের স্বরে বলিলেন—মেয়ের এম্-এ, বি-এ পাস দিচ্ছে ? বলে কি বাবাজী । কই এ-কথা শুনিনি তো ? -- —এ পাড়াগায়ে বসে শুনবেন কোথা থেকে 1 ছেলেরা যেখানে কখনো স্কুলের ১ । দেখেনি, সেখানে মেয়েদের লেখাপড়ার কথা তো ভাবতেই পারবেন না । ওদিকে সাতকড়ি মুখুয্যে একটু অপ্রতিভ হইলেন। শুধু অপ্রতিভ নয়, কোথায় যেন তিনি নিজেকে অপমানিত বিবেচনা করিলেন। পাচ পাচটি ছেলের কোনোটিকেই তিনি লেখাপড়া শেখানোর কোনো চেষ্টা করেন নাই—গান-বাজনা শিথিলে ভদ্রসমাজে, মজলিসে সর্বত্র সন্মান ও গৌরবলাভ করা যাইবে—এতদিন তিনি ইহাই জানিয়া আসিয়াছেন, ছেলেগুলিকে সেই অনুসারেই মানুষ করিয়াছেন। কুলবেড়ের বাহিরে বড় জগৎটাতে যে অন্ত ধরনের হিসাব-নিকাশ প্রচলিত, তাহীদের খোজও তিনি জানিতেন না। ডিনি নিঃশবে তার বেহালাখান খেরোর খাপের মধ্যে পুরলেন, রজনের থলিটা সবার অলক্ষ্যে বড় ছেলের হাতে তুলিয়া দিলেন। একটু পরে জলযোগের ডাক পড়িল। ইহাও কেবল মাত্র ভাবী পাত্রের জন্ত নহে, গ্রামস্থ সকল নিমন্ত্রিত ভদ্রলোকের জন্ত । ছেলেটি এই প্রথম পাত্রীর বাড়ি দেখিল। দেখিয়া একটু নিরাশ হইল। চার পাঁচখানি