পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অভিযান্ত্রি ❖öሳ বাউরির বাস করে, তাদের একটা ছোট পাড়া। কিন্তু এরা সকলেই নিকটবর্তী কলে কাজ করে, শহর এসেচে গ্রামের পাশে, শহরের সভ্যতা ও জীবনযাত্রাপ্রণালী গ্রামের শাস্ত গৃহকোণে এনে দিয়েচে ব্যস্ততা কোলাহল ও শৌখিনতার মোহ । একজন বললে—কাছেই পাষাণকালী মন্দির, দেখবেন না ? নিম্তের পাষাণকালী জাগ্রত দেবতা—ছোট মন্দিরের মধ্যে বিগ্রহটি ভাল চোখে পড়ে না, বড় অন্ধকার ভেতরটাতে। মন্দিরের সামনে একটা পানভিরা পুকুর । পুকুরের ওপারে বাউরিদের ঘাটে বাউরিদের ঝিবৌয়েরা জল নিতে নেমেচে । কিছুক্ষণ বাধা ঘাটে বসে থাকবার পরে একটি ছোট ছেলে এসে বললে—বাবা আপনাদের ডাকচেন—আসুন আপনারা— আমরা একটু আশ্চর্য হয়ে এগিয়ে গেলুম। ইটের দেওয়াল দেওয়া একখানি খড়ের ঘর। দারিদ্র্যের ছায়া সে বাড়ির সারা অঙ্গে। বাড়ির মালিক হলেন ওই পাষাণকালীর পূজারী— তিনিই আমাদের ডেকেচেন তার ছেলেকে পাঠিয়ে। অনেকদিনের কথা। পুজারী ঠাকুরের বয়েস বা চেহারা আমার মনে নেই। তিনি জিজ্ঞেস করলেন—আপনারা কোথা থেকে আসচেন ? —কলকাতা থেকে । —আপনারা ? —আমি ব্রাহ্মণ, আমার এই বন্ধুটি কায়স্থ । —পুজো দেবেন মায়ের ? আমার মনে হল এখানে দিলে ভালো হয়। লোকটা গরিব, দিলে ওর উপকার করা হয় বটে। ইতিমধ্যে দেখি একটি বেী, সম্ভবত পূজার ব্রাহ্মণটির স্ত্রী, দুখান আসন আমাদের জন্তে বিছিয়ে দিয়ে গেল। আমার বাস্তবিক কষ্ট হতে লাগলো—এরা ভেবেচে কলকাতা থেকে পয়সাওয়ালা বাবুর এসেচে–ভালো ভাবেই পুজো দেবে—দু পয়সা আসবে। কলকাতার বাবু যে দুটি পয়সা অভাবে হেঁটে সারাপথ এসেছে—সে খবর এর রাখে না। রমেশবাবু পকেট থেকে দুটি পয়সা বার করলেন, আমার পকেট থেকে বেরুলো একটা পয়সা। পূজারী ঠাকুর বেশি কিছু আশা করেছিলেন, তা হল না, তবুও দুটি নারকেলের নাড়, প্রসাদ দিলেন আমাদের হাতে । সন্ধ্যা হয়েচে, বাশবাগানের তলায় অন্ধকার বেশ ঘন। আমরা বেলঘরিয়া স্টেশনে এসে কলকাতার গাড়ি ধরলুম। আমার বন্ধু নীরদ আমার সঙ্গেই মেসে থাকে। দুজনেরই অবস্থা সমান। কলকাতা থেকে বেরুনো হয়নি কোথাও অনেকদিন । নীরদ বললে—শ্চল, কোথাও রেলে বেড়িয়ে আসি— दि. ब्र २-२२