পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

TM8Ꮤ% বিভূতি-রচনাবলী আখড়া দেয়। এ অঞ্চলে থিয়েটার বড় একটা দেখিনি কোথাও—ওটা হল কলকাতা-ঘেঁষা জায়গার ব্যাপার। এই সব ভদ্রবংশের লোকের না আছে খাটবার ক্ষমতা, না আছে উদ্যম উৎসাহ কোনো কাজে । কোনো নবাগত উৎসাহী লোক জনহিতকর কোন কাজ করতে চাইলে এর তাদের বুঝিয়ে দেবে যে ও রকম অনেক হয়ে গেছে, ও করে কোনো লাভ নেই। কুঁড়ে লোকেরা সর্বজ্ঞ হয় সাধারণত । শুধু মুন্দরপুর নয়, অন্যান্ত গ্রামেও ঠিক এই রকম দেখেচি এবং পল্লীগ্রামের ভবিষ্যৎ ভেবে হতাশ হয়েচি। আর পঞ্চাশ বছর এইভাবে চললে, গ্রাম থেকে উচ্চবর্ণের হিন্দু নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে—এখনই যেতে শুরু করেচে। সুন্দরপুর ছাড়িয়ে একটা বড় বাওড় পড়লো সামনে, নদীর মতো চওড়া, জলও বেশ স্বচ্ছ, পার হবো কি করে বুঝতে পরিচি নে, এমন সময়ে একটি বুদ্ধার সঙ্গে দেখা হল। সে নীচু হয়ে জলের ধারের কলমির বন থেকে কচি কলমি শাক তুলে আঁটি বাধছিল। জিগ্যেস করতেই সে হাত তুলে দেখিয়ে বললে—সামনে দিয়ে যাও বাবা, ওইদিকি আগাড় পড়বে। বঁওড়ের আগাড় মানে বাওড়ের একদিকের প্রান্তসীমা, যেখানে গিয়ে বাওড় শুকিয়ে বা মজে শেষ হয়ে গেল—সুতরাং ঘুরে পার হওয়া যায় সেখানটাতে। আধ মাইলের কিছু বেশি যেতে আগাড় দেখা গেল—সেখানে একটা বড় বট গাছের তলায় কি একটা হচ্চে দূর থেকেই দেখতে পেলাম। কাছে গিয়ে দেখি ওপারে বাওড়ের ধীরে একটা বট গাছের তলায় কারা কলের গান বাজাচে, আর তাই শুনবার লোভে প্রায় পঞ্চাশ ষাটটি ছেলে-মেয়ে কি-বেী একত্র জড় হয়েচে । বাওড়ের ঘাটে জল নিতে এসে বউয়েরা শুনচে, সবই চাষা লোক, এ সব গ্রামে ভদ্রলোকের বাস আদৌ নেই। বেল প্রায় একটা হবে। আমিও একটু বিশ্রাম করে নেবার জন্তে বটতলার ছায়ায় গিয়ে বসলুম। কলের গানওয়ালার গাছের উচু শেকড়ের ওপর বসেচে, আমায় ভদ্রলোক দেখে ওরা লাজুক মুখে আমার দিকে চেয়ে চেয়ে দেখলে। সস্তা খেলো গ্রামোফোনের টিনের লম্বা চোঙের মুখ দিয়ে কর্কশ, উচ্চ, অস্বাভাবিক ধরনের গলার আওয়াজ বেরুচ্চে। বাজে হালকা স্বরের গান বা ভাড়ামির রেকর্ড সবই— আমি জিজ্ঞেস করলুম—তোমাদের ভালো কিছু আছে ? —বাবু, আপনাদের যুগ্য কনে পাবে, এ সব এই চাষা-ভূলোনে— —তোমরা যাবে কোথায় ? —আমাদের বাড়ি ওই নাভারনের কাছে। কুলে রণঘাটের মেলায় কলের গান নিয়ে যাচ্চি বাৰু, যদি ছ চার পয়সা হয়—আপনাদের শুনবার যুগ্য এ জিনিস নয়, সে আমরা জানি।