পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৫০ বিভূতি-রচনাবলী তবে ওই দোষ, মাঝে মাঝে ম্যালেরিয়ায় ভোগে। এই সেদিন জর থেকে উঠলো—পেটজোড়া পিলে, হাবুল ডাক্তারের ওষুধ দুশিশি থাইরে এখন একটু বাগান গা থেকে চলে আসবার পথে আমার কত বীর মনে হয়েচে পল্পীজীবনের এই সব গুরুতর সমস্তার কথা । এসব নিয়ে প্রবন্ধ লেখা চলতে পারে কিন্তু এ সমস্যার সমাধান করবে কে ? এ প্রশ্নের উত্তর নেই। এবারের ভ্রমণ সম্পর্কে আর একটি ঘটনা আমার বড় মনে আছে। ফিরিবার পথে একটা সকোর ওপর বসেচি, বেলা তিনটে—জ্যৈষ্ঠমাসের ধর রৌদ্র মুখের ওপর এসে পড়েচে, একটি বৃদ্ধ কাঠ কুড়িয়ে ফিরচে। আমার দিকে চেয়ে সে আমার সামনে দাড়ালো। তারপর মায়ের মতো স্নেহসিক্ত উদ্বিগ্ন কণ্ঠে বললে—বাব, বড় রন্ধর লাগচে মুখটাতে, উঠে এসো— বুদ্ধার গলার সুরে আন্তরিক স্নেহ ও দরদের পরিচয় পেয়ে আমি চমকে উঠলুম যেন। সে আবার বললে, উঠে এসে বাবা, ওখানডাতে বোসে না—পড়ন্ত রদ রটা— হয়তো আমি উঠে গিয়েছিলাম অন্যত্র, হয়তো তার সঙ্গে আমার আরও কি কথা হয়ে থাকবে—কিন্তু সে সব আর আমার মনে নেই । সে লিখতে গেলে বানানো গল্প হয়ে যাবে। এতদিন পরেও তুলিনি কেবল বুদ্ধার সেই মাতৃমূর্তি, তার সেই দরদভরা উদ্বিগ্ন গলার স্বর। আমি চাকুরি উপলক্ষে একবছর পূর্ববঙ্গ ও আরাকানের মাংড় অঞ্চলে যাই। সে সময় রেলে স্টীমারে আমার অনেক অদ্ভুত ধরনের অভিজ্ঞতা হয়। অন্ত কোনো ভাবে এদের বল যায় না, এক এই ধরনের ভ্রমণ-কাহিনী ছাড়া। তাই এখানে সেগুলি লিপিবদ্ধ করবো। গোড়া থেকেই কথাটা বলি। কলকাতায় বসে আছি, চাকরি নেই—যদিও চাকুরির চেষ্টায় ঘোরাঘুরি করি। একটি মাড়োয়ার ফর্মের বাইরে দেখলুম বিজ্ঞাপন দেওয়া আছে, দুজন লোক তারা চায়। কোনোদিকে না চেয়ে সোজা ঢুকে পড়লুম, আপিসের ভেতরে। আপিসটি স্বনামধন্ত ব্যবসায়ী কেশোরাম পোদারের। বিজ্ঞাপন দেখে এসেচি শুনে আপিসের দারোয়ান আমায় একটা ছোট ঘরে নিয়ে গেল। সামনেই বসে ছিলেন কেশোরাম পোদ্দার, তখন অবিহি,চিনতুম না। কেশোরাম পোদার হিন্দিতে জিগ্যেস করলেন—আপনি কি পাস ? বললুম, বি এ পাস করেচি ও বছর। --কি জাতি ? —ব্রাহ্মণ —বক্তৃতা দিতে পারেন ? কিসের বস্তৃত ? ভালো বুঝতে পারলুম না, কিন্তু চাকুরির বাজার যেমন কড়া, তাতে কোনে কিছুতেই হঠলে বা ভয় খেলে চাকুরি-প্রাপ্তির স্ব-ও বা সম্ভাবনা ছিল তাও তো গেল। এ অবস্থায় বকৃড়া তো সামান্ত কথা, কেশোরামজি দি জিজ্ঞেস করতেন “আপনি নাচতে জানেন " তা হলেও আমার মুখ দিয়ে ই ছাড়া না বেরুতো না।